বছর পঞ্চান্নর সুভাষ চক্রবর্তী ও তাঁর স্ত্রী প্রতিমা চক্রবর্তীর এই চায়ের স্টলে খাবারের স্বাদ নিতে দূর থেকেও অনেক মানুষ আসছেন নিয়মিত। সকাল-বিকাল দু বেলাই মিলছে স্বাস্থ্য প্রদ বহু পদের এই টিফিন। যার কদর ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া মারফৎ ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে শহরতলিতে।
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের পিছনেই ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের উকিলা পাড়াতে বাড়ি সুভাষবাবুর। ১১ বছর ধরে মিশন গেটের কাছে নেতাজী সুভাষ রোডের উপর চায়ের দোকান চালাচ্ছেন তিনি। 'জয় বাবা লোকনাথ টি স্টল' নামে সেই দোকানে, প্রতিদিন ভোর হতেই চলে আসেন সুভাষ ও তার স্ত্রী প্রতিমা। চলে ঘুগনি তৈরি, ডিম সিদ্ধ করার কাজ। সঙ্গে চা, বিস্কুট বিক্রি। লকডাউন এর জেরে যখন মানুষ আর্থিক ক্ষতিতে জেরবার, তখন ২৫ টাকায় পাঁচ রকম খাবার চালু করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন চক্রবর্তী দম্পতি (South 24 Parganas News)।
advertisement
সুস্বাদু খাবার এর পাশাপাশি আন্তরিক ব্যবহারে ভিড় লাগে ক্রেতাদের। হঠাৎ এমন উদ্যোগ কেন? সুভাষবাবু জানালেন, "এলাকায় চায়ের দোকান প্রচুর আছে। তাই ক্রেতা ধরতে গেলে অভিনব কিছু করতে হবে। কম পয়সায় মানুষকে ভাল খাবার দিতে হবে। তাই আমরা এই টিফিন আইটেম চালু করি"। দোকান মালিকের কাছ থেকেই জানা গেল এক প্লেট ঘুগনি, তিন পিস স্লাইস পাউরুটি, ডিম, কেক, কলা দিতে খরচ হয় একুশ থেকে বাইশ টাকা। লাভ প্লেট পিছু তিন টাকা। এত স্বল্প লাভে সংসার চলে কি করে? প্রতিমাদেবী বলেন, "আমাদের একটি ছোট ছেলে আছে, ক্লাস সিক্সে পড়ে। মেদিনীপুরে মামার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করে। দোকান থেকে যা আয় হয় তাতে আমাদের দুজনের চলে যায়"।
চাইলে কি আর একটু বেশি লাভ করা যেত না? প্রশ্নের উত্তরে মৃদু হাসেন প্রতিমাদেবী। বলেন, "লোভের আর লাভের কি কখনো শেষ আছে? আমরা চাই সবাই কম পয়সায় ভাল খাবার খাক। গত কয়েক বছর ধরে যে বিপর্যয় চলছে তাতে মানুষের হাতে পয়সা নেই, কিন্তু পেটের খিদে তো আছে। তাই এমন ভাবনা"।(South 24 Parganas News)
কথা বলে জানা গেল, ইদানিং কলা ও ডিমের দাম বেড়ে গেছে। তাই যা লাভ হওয়ার কথা তার থেকে কম লাভ হচ্ছে। যদিও এতে পরোয়া নেই দম্পতির। গড়িয়া, সোনারপুর, কামালগাজি থেকে লোকজন কাজে যাওয়া আসার পথে ওই দোকানে টিফিন সারেন। রক্তিম দাস নামে এক হকার বলেন, "এখানাকার খাবার শুধু কম দাম নয় সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যপ্রদও। খেলে শরীরে কোন ক্ষতি হবে না"। নরেন্দ্রপুর গ্রীনপার্ক এলাকার শিক্ষক সৌমিত্র কর বলেন, "ইচ্ছে হলেই দোকানে বসে খাই আবার মাঝেমধ্যে পার্সেল করে বাড়ি নিয়ে যাই"।
দূর্মূল্যের এই বাজারেও ক্ষুধার্তদের পেটে খাবার জুগিয়ে বেঁচে থাকুক সস্তার এই লোকনাথ টি স্টল, আশা পথচলতি মানুষের।
Rudra Narayan Roy






