আজ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৬ তম জন্মদিন সারা দেশে সাড়ম্বরে পালন করা হচ্ছে। এই দিনটিকে ভারতবর্ষে পরাক্রম দিবস হিসেবেও উদযাপন করা হয়। সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে সুভাষগ্রামে নেতাজির পৈতৃক বাড়িতে পালন করা হয় নেতাজির জন্মবার্ষিকী। নেতাজির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাজিয়ে তোলা হয় গোটা বাড়িটি।
এদিন সকাল থেকে নেতাজির পৈতৃক বাসভবনের সামনে উপচে পড়েছে ভিড়। নেতাজির স্মৃতি বিজড়িত সংগ্রহশালাও দেখতে পাবেন সাধারণ মানুষ।২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি সরকারি সভা থেকে ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজির পৈতৃক বাসভবন দেখতে আসেন। তখনই ওই বাড়ির ভগ্নদশা দেখে তিনি বিস্মিত হন। সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি ওই বাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণা করেন। তার পর থেকেই হেরিটেজ কমিশন ও রাজ্যের পূর্ত দফতর মিলে ওই বাসভবনের সংস্কার শুরু করে।
advertisement
আরও পড়ুন : জীবনের ধ্রুবতারা দেশনায়কের মতোই পোশাক, এলাকায় 'নেতাজি' নামেই পরিচিত এই টোটোচালক
২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত চলে এই সংস্কারের কাজ। ৯০% কাজ শেষ হলেও ২০২০ সালে কোভিডের জন্য বাকি কাজ শেষ করা যায়নি। বসু পরিবারের সম্মতি নিয়েই জানকীনাথ বসু বাড়িটিকে যে ভাবে তৈরি করেছিলেন ঠিক সেই আদল বজায় রেখেই সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। সেই কড়ি-বড়গা, কাঠের জানলা, টালির চাল, ইট বিছানো পথ সব কিছুই নিপুণ ভাবে করা হয়েছে। বাড়ির একটি বা দু'টি ঘরে পর্যটকদের জন্য অতিথি নিবাস করার পরিকল্পনা করেছিল সরকার।
বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতবর্ষের স্বদেশী আন্দোলনের ইতিহাস। বহু ব্যবহৃত জিনিসপত্র এই বাড়ির মধ্যেই দেখা যায়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জড়িত এই বাড়ির সঙ্গে। প্রায় ২০০ বছর আগে, নেতাজির পিতামহ হরনাথ বসু কটক থেকে কোদালিয়ার চিংড়িপোতায় বসতি স্থাপন করতে এসেছিলেন। ওই এলাকায় বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা ছিল তাঁর। জমি কিনেও বাড়ি তৈরি করতে পারেননি। নেতাজির বাবা জানকীনাথ বসু তার বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে চেয়েছিলেন এবং সেখানে একটি বিশাল বাড়ি তৈরি করেছিলেন।দুই তলা সহ আটটি কক্ষ নিয়ে গঠিত বাড়িটি। সুভাষচন্দ্রের পিতার দুর্লভ বই সম্বলিত একটি 'বীণাপাণি লাইব্রেরি' রয়েছে।
আরও পড়ুন : চৌকিদারের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে গোপন নির্দেশ, ঐতিহাসিক এই বাড়িতে ছড়িয়ে নেতাজির অজস্র স্মৃতি
জানকীনাথ বসু প্রায়ই ছেলেকে এই বাড়িতে নিয়ে আসতেন। নেতাজি প্রতি বছর দুর্গা অষ্টমীতে অঞ্জলি দিতে এখানে আসতেন। তিনি প্রায়ই এই বাড়িতে অন্যান্য বিপ্লবীদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠক করতেন। বেশির ভাগ সভা হয়েছে বাড়ির পাশের পুকুরের পাশে। সময়ের সঙ্গে থিয়েটার হলের মতো বাড়ির আরও অনেক অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
রাজ্য সরকার একে হেরিটেজ হাউস হিসেবে ঘোষণা করেছে। হেরিটেজ কমিশনের কর্মীদের সহায়তায় ২০১৫ সালে বসু পরিবারের সম্মতি নেওয়ার পরেই বাড়িটি পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছিল। এই বাড়িটির পুঙ্খানুপুঙ্খ সংস্কারের পরে, নেতাজির ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য নেতাজি কৃতি কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে একটি গেস্ট হাউস তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মমুহূর্ত দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটে শঙ্খধ্বনি বাজান স্থানীয় মহিলারা । সোনারপুর রাজপুর পুরসভার কাউন্সিলর পল্লব দাস বলেন, " সারা ভারতে এই দিনটি পালিত হয়। কোদালিয়ায় নেতাজির পৈতৃক ভিটেতে আমরা এই দিনটি খুব সাড়ম্বরে আনন্দের মাধ্যমে পালন করি। পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করা হয়। নেতাজির ভাবধারাকে যুব সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে আদর্শ সমাজ গড়ে তোলার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।"