লোহার গেট খুলে বাড়িতে ঢুকতেই দেখা গেল কাঠের দরজার সামনে গৌতম বুদ্ধের নকশা । দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে চোখে পড়ে কাজের আলমারিতে থাক থাক বই। বই তো আছেই সঙ্গে কিছু চেয়ার ও টিভি টেবিলের উপর রাখা বিভিন্ন বিষয়ের বই সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন৷ তিন তলা বিশিষ্ট বাড়ির প্রতিটি তলাই যেন একটি লাইব্রেরি। আর প্রতিটিই যেন একইভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। বাড়ির বাইরে সাদা রংয়ের দেয়ালে কালো রং দিয়ে লেখা শ্যামল একাডেমি লাইব্রেরি । নিচের লাইনে লেখা এই টেক্সট কাউন্সিল কাল্টিভেশন এন্ড রিট্রিভাল সেন্টার।
advertisement
আরও পড়ুন: কর্মীর অভাবে বন্ধ পাঁচ লাইব্রেরি! দ্রুত খোলার আশ্বাস মেয়রের
কাজলের নিজস্ব অভিনব গ্রন্থাগার ঠাসা বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলা বিভাগের পাঠ্যবই ও জার্নালে। মেডিকেল ,ইঞ্জিনিয়ারিং ,আইন, সাংবাদিকতার ওপর ও নজরে পড়ল অনেক বই। সবাই গিয়ে বই পড়তে পারেন সেখানে। স্কুল-কলেজের ছেলে মেয়েরা যাতে লাইব্রেরিতে আসে সেজন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে আমন্ত্রণপত্র দিয়ে এসেছেন একই কথা বলেছেন পরিচিত সবাইকে, এলাকার লোকেদের।
কিভাবে এমন একটি লাইব্রেরি বানানোর ভাবনা এল ? প্রশ্ন শুনে অনেক কথার মাঝে কাজলের জবাব বইয়ের মাধ্যমে মানুষ যাতে সত্যকে উদঘাটন করতে পারে সেই ভাবনা থেকেই এই গ্রন্থাগার। বই পড়লেও যে কোন বিষয়ের গভীরে যাওয়া যায়। পড়াশোনার ঝোঁক থেকেও গ্রন্থাগার বানানোর ভাবনা তার মধ্যে চলে আসে। বিভিন্ন সময় অনেকেই বই কেনার পাশাপাশি কাজলকে লাইব্রেরি করার জন্য বই দিয়েছেন। কুড়ি হাজার বিভিন্ন বিষয়ের উপর জার্নাল কাজল সংগ্রহ করেছেন।
আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধী টেবিল টেনিস খেলোয়াড়দের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে না কেউ!
কেউ যদি চান তাহলে দিনরাত লাইব্রেরি খুলে রাখবেন বলে মন্তব্য তার। অবিবাহিত কাজলের সংসারে শুধু মা ও দাদা রয়েছে । নিজের বাড়ি একেবারেই পাশে । লাইব্রেরীর বাড়িটা শুধু বইয়ের জন্য। তিনতলার লাইব্রেরি ঘুরে ঘুরে প্রতিটি সেলফ খুলে বই দেখানোর ফাঁকে কথা বলেছিলেন বইঅন্ত প্রাণ ভদ্রলোক। তাঁর লাইব্রেরিতে আলাদা আলাদা প্রতিটি বিষয়ের বই রাখা । সেল্ফে একটি খাতা থাকে যে খাতায় সমস্ত বইয়ের তালিকা লেখা থাকে।
গুব়ুং বস্তির যেখানে কাজলের এই লাইব্রেরী তার চারপাশে বাজার আর কাছেই মহানন্দা নদী ৷ শিলিগুড়ির মানুষের কাছে এটাই একটা গর্বের দ্রষ্টব্য জায়গা হয়ে উঠতে পারে। তার বাড়ির গেটে দরজার সামনে গৌতম বুদ্ধের নকশার কথায় কথায় বলেছিলেন,পৃথিবীর পাঠশালাতে আমি পড়াশোনা করে চলছি। কাজে যেন নিজেই শিলিগুড়ির জ্ঞান বৃক্ষ।
অনির্বাণ রায়





