বিগত ২ দশক ধরে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা করে আসছেন স্বপন রায়। শুধুমাত্র চিকিৎসা নয় ওষুধ ও দেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। সবাই তাঁর নাম দিয়েছে "গরিবের ডাক্তার।" রোদ, বৃষ্টি, ঠান্ডাকে উপেক্ষাকরে লোকের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে তিনি এই পরিষেবা দিয়ে থাকেন।
স্বপন বাবুর নিজের বাড়ির টিনের চালে ফুটো। বৃষ্টির দিনে জল চুইয়ে পড়ে ঘরে। বাড়িতে খাবারের যোগান নেই ঠিক করে। কিন্তু তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। বিনামূল্যে এই পরিষেবা প্রদান করে আসছেন দুই দশক ধরে। এখন তিনি শিলিগুড়ি শহর ও শহরলাগোয়া জলপাইগুড়ি জেলার বেলাকোবার বনবস্তি নদীধাবাড়ি আমবাড়ি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। সর্বত্র তিনি গরীবের ডাক্তার হিসেবে জনপ্রিয়। তাঁর এই বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার জন্য বহু মানুষ তাঁকে সেলাম জানাচ্ছেন। বিভিন্ন অঞ্চলের শিবির করে নিরলস ভাবে মানুষের সেবা করে চলেছেন ডাক্তার স্বপন রায়। তাঁর দেওয়া ওষুধ নিতে, চিকিৎসা পেতে দূরদূরান্ত এমনকি বাংলাদেশ থেকেও ছুটে এসেছেন প্রচুর মানুষ।
advertisement
আরও পড়ুন : এক ছাদনাতলায় ১৬ জোড়া বিয়ে দিলেন! জঙ্গলমহলের মেয়েদের যেন রক্ষাকবচ সনাতন দাস
আরও পড়ুন : বদল হবে না 'পাঠান'-এর নাম! শাহরুখের সিনেমার নয়া লুক নেটমাধ্যমে
ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার। কিন্তু বাবা ছিলেন সামান্য শ্রমিক। অভাবী ঘরের ছোট ছেলেটি বড় হয়ে পাড়া পড়শিদের কাছে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নের কথা জানালে অনেকেই টিপ্পনি কেটে বলতো, গরিবের ঘর থেকে ডাক্তার হওয়া কি সহজ কথা ?গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। তাঁদের কথায় মনে আঘাত পেলেও মনের জেদ আরও বেড়ে যেত স্বপন রায়ের। এভাবেই তিনি যখন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে দেখতে বড় হচ্ছেন, সে সময় একদিন তার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবাকে চিকিৎসার জন্য শহরের বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান তিনি। কিন্তু হাজার টাকা ভিজিট আর ২০০০ টাকা ওষুধ কেনার সামর্থ পরিবারের না থাকায়, মৃত্যু হয় তাঁর বাবার ।
তখন থেকে মনে আরও বেশি করে জেদ চেপে বসে। ডাক্তার তাঁকে হতেই হবে এবং বিনা পয়সায় গরিব মানুষের চিকিৎসা করতে হবে। সেই জেদ থেকেই হোমিওপ্যাথি কলেজে পড়াশোনা এবং ডাক্তারি পাশ করা। সেই থেকে ডাক্তার স্বপন রায় শহর লাগোয়া বন-বস্তিগুলোতে গিয়ে গরীব মানুষের বিনা পয়সা চিকিৎসা করছেন। এমনকি গরীব মানুষের চিকিৎসার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে শুরু করেন। স্ত্রী-এর সোনা গয়না পর্যন্ত বন্ধক রেখেছেন তিনি। তাঁর কথায়, "আমি আমার পরিবার দু'মুঠো ডাল ভাত পেলেই হল, কিন্তু চিকিৎসার অভাবে যেন কেউ প্রাণ না হারায়। কীভাবে তিনি সকল ডাক্তারদের কাছে অনুরোধ করছেন যদি একদিন অন্তত বিনামূল্যে এই পরিষেবা কেউ দিতে পারেন। তাতে দুটো গরীব মানুষের উপকার হবে।"
অনির্বাণ রায়