জিলিপি বা জলেবির উৎপত্তি মধ্যপ্রাচ্যে। মনে করা হয়, পার্সি আক্রমণকারীরা ভারতে নিয়ে এসেছিল এই জলেবি। তবে এই মুহূর্তে কোনও সন্দেহ নেই যে, ভারতের মানুষ আবেগের সঙ্গে তাকে আপন করে নিয়েছে। এমনকি বাঙালি ঘরে তার আদরের নাম ‘জিলিপি’। এটি মূলত মিহি ময়দা থেকে তৈরি, প্যাঁচালো আকারে ভেজে জাফরান চিনির সিরাপে ভিজিয়ে রাখা হয়। রসিক বাঙালি মহলে ‘জিলিপির প্যাঁচ’ কথাটিও বেশ জনপ্রিয়! যদিও মিষ্টি ভাব মোটেই নেই তাতে! বেশিরভাগ মানুষ জিলিপি মাত্রই ময়দার বোঝে। কিন্তু মুগ ডাল থেকে জিলিপি তৈরি হয় যা নাড়াজোল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর ভোগে লাগে। বাড়িতেও বানিয়ে পরিবারের লোকজনকে খাওয়াতে পারেন এই মুগের জিলিপি৷
advertisement
আরও পড়ন Durga Puja 2022: আহেলী-র পুজোর ভোজে মিলবে জেলার স্বাদ!
কীভাবে বানানো যায় মুগের জিলিপি? মুগের জিলিপি বানাতে হলে প্রয়োজন মুগ ডাল। ভাজার জন্য তেল বা ঘি, চিনি। চিনির সঙ্গে জল মিশিয়ে তৈরি করা হয় মিষ্টির রস। প্রথমে মুগের জিলিপি বানাতে মুগ ডাল জলে ভেজাতে হয়। এক ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখার পর মুগ ডাল তুলে নিয়ে বাটতে হয়। এরপর বাটা ডালটাকে ভাল করে ফেটিয়ে নিতে হয়। তারপর গরম তেল বা ঘি তে ভাজা হয় জিলিপি। ভালভাবে ভাজা হয়ে গেলে জিলিপি মিষ্টির রসে ডুবিয়ে রাখা হয়। এভাবেই মুগের জিলিপি তৈরি হয়। এক কেজি মুগডাল থেকে প্রায় একশো কুড়িটি মুগের জিলিপি তৈরি হয়।
দক্ষিণ পূর্ব রেল শাখার হাওড়া খড়গপুর লাইনে হাউর স্টেশন। হাউর স্টেশনের দক্ষিণ পাশে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে মুগের জিলিপি তৈরি করছেন বিশ্বনাথ ভৌমিক। তিনি তার বাবার কাছ থেকে মুগের জিলিপি তৈরি করা শিখেছিলেন। হাউর স্টেশনে বিশ্বনাথ ভৌমিকের মুগের জিলিপি খেতে ভিড় করে মিষ্টি প্রেমী মানুষজন।
বিশ্বনাথ বাবু বলেন তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে মুগের জিলিপি বানানো শিখেছিলেন। তিনি এই কাজ করছেন ৩০ বছর ধরে। অন্যান্য মিষ্টির চেয়ে মুগের জিলিপি বেশি লাভজনক। এক হাজার মিষ্টি বানাতে খরচ হয় প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এক হাজার মুগের জিলিপি থেকে লাভ হয় আড়াই হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকা। এক সময় মুগের জিলিপি বছরে তিনটে সময়- জামাইষষ্ঠী, দুর্গাপুজো ও ভাতৃদ্বিতীয়াতে বানানো হত। বর্তমানে মানুষ এই মিষ্টি পছন্দ করায় প্রতিদিনই মুগের জিলিপি বানাতে হয় বলে জানান বিশ্বনাথ ভৌমিক।
আরও পড়ুন Durga Puja 2022 : এবার পুজোয় সপ্তপদীতে থাকছে বুফের ব্যবস্থা, এছাড়াও আরও চমক
পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কয়েকটি এলাকায় মুগের জিলিপি বানানো হলেও পাঁশকুড়া থানার অন্তর্গত হাউরের বিশ্বনাথ বাবুর মুগের জিলিপি সুস্বাদু হওয়ায় মানুষ তার দোকানের জিলিপি কিনতে আসে। নাড়াজোল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর ঠাকুর ভোগের এই মিষ্টি আপনিও যদি গরম গরম বাড়িতেও বানিয়ে খেতে পারেন।
Saikat Shee