কোলাঘাটের আমলহান্ডা এলাকায় রয়েছে কোলাঘাট গভর্নমেন্ট পলিটেকনিক কলেজ। যার পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ৩৫০ জন। সেই কলেজেরই তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শুকদেব রাউত। পাশের হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া থানার গঙ্গারামপুর এলাকার বাসিন্দা। বাবা গৌতম রাউত বেশ কয়েক বছর ধরেই শারীরিকভাবে অসুস্থ। স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে গ্রামের এক চিলতে মাটির বাড়িতে কোনও রকমে তাঁদের অভাবের সংসার। দিনমজুরির কাজ করে কোনও রকমে সেই সংসার চালিয়ে নিয়ে গেলেও দীর্ঘ শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেটাও বর্তমানে আর সম্ভব হয় না।
advertisement
আরও পড়ুন: রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মে আসতে চলেছে নতুন এই সুবিধা! স্বস্তির নিশ্বাস যাত্রীদের
পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের যাবতীয় দায়ভার কাঁধে এসে পড়ে কোলাঘাটের এই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শুকদেবের উপর। তাই বাধ্য হয়েই পড়াশোনার ফাঁকেই রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসারের হাল ফেরানোর আশায় দিন গুনছিলেন এই তরুণ। এদিকে ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচও তাঁকেই জোগাতে হত। ফলে দীর্ঘ এই শারীরিক এবং মানসিক চাপে এমনিতেই বেশ কয়েক মাস ধরে ভেঙে পড়েছিলেন শুকদেব। এমন পরিস্থিতিতে দিন কয়েক আগে কলেজে এসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সতীর্থ পড়ুয়াদের প্রচেষ্টায় তাঁকে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে তার দু’টি কিডনির সমস্যার কথা জানা যায়। আর তাতেই যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া অবস্থা ওই হতদরিদ্র পরিবারের।
চিকিৎসার খরচের পাশাপাশি সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা আসবে কীভাবে? প্রায় দিশেহারা শুকদেব। তাঁর এই অসহায় দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়াযন কলেজের প্রায় সমস্ত পড়ুয়া থেকে শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। নিজেদের সাধ্যমত সাহায্যের পাশাপাশি দু’টি কিডনি বদলের বিপুল খরচ জুগিয়ে বন্ধুকে বাঁচাতে কৌটো হাতে অর্থ সংগ্রহ করতে নেমে পড়েছেন সকলে। ওই পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রছাত্রীরা সম্মিলিত ভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মেছেদা, পাঁশকুড়া স্টেশনের পাশাপাশি খড়্গপুর স্টেশন এলাকাতে গিয়েও সাহায্যের আবেদন জানান। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা চাই শুকদেব সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসুক।’’
আরও পড়ুন: নদীর ধার থেকে ছুটে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা! এ কী অবস্থা সুন্দরবনের, আতঙ্ক চারদিকে
শুকদেবের খুব কাছের এক বন্ধু শঙ্খশুভ্র সিট বলেন, ‘‘পড়াশোনার ফাঁকে সংসারের হাল ফেরাতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে শুকদেব নিজের শরীরের ন্যূনতম খেয়াল রাখেনি। অনিয়মিত জীবন যাপন, সময় মতো না খাওয়া, এবং হাড়ভাঙা খাটনির জন্য ওর দু’টো কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এমন অবস্থায় কিডনি বদলের খরচের পাশাপাশি সংসার কীভাবে চলবে, সেটা ভেবেই এভাবে আমরা এখন সকলের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।’’ কলেজের প্রিন্সিপাল ইনচার্জ সৌমেন সাহা বলেন, ‘‘বর্তমানে এসএসকেএম-এ ডায়ালিসিস চলছে। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের এই মেধাবী ছাত্রটিকে বাঁচাতে ব্যক্তিগতভাবে আমরাও সাধ্য মতো সাহায্য করব। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছেও সাহায্যের আবেদন আমরা জানিয়েছি।’’
Saikat Shee