দেশের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো-এর খেলায় দেড় কোটি টাকা জেতার টোপ গিলে ৮৫ লক্ষ টাকা খুইয়েছিলেন এক যুবক। ময়নার কলাগেছিয়া গ্রামের ওই যুবকের নাম মনোজ মণ্ডল। এ পর্যন্ত এটাই পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সর্বাধিক অঙ্কের প্রতারণা বলে জেলা পুলিশ জানিয়েছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ ওই যুবককে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিতে পেরেছে। প্রতারণা চক্রের খপ্পরে পড়ে দু’বিঘার বেশি জমি খুইয়েছেন মনোজ। বেশ কয়েকজনের থেকে ধার করেছেন আরও ২০ লক্ষ টাকা। পাওনাদাররা এখন প্রায়ই টাকার জন্য মনোজের বাড়িতে হানা দিচ্ছেন।
advertisement
আরও পড়ুনঃ শীতের শেষ ইনিংস! সপ্তাহান্তে দিঘা যাচ্ছেন? কেমন থাকবে আবহাওয়া, জানুন
ঘটনার সূত্রপাত ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। হঠাৎই একদিন মনোজের হোয়াটস অ্যাপে একটি মেসেজ আসে। সেখানে বলা হয়, মনোজ জনপ্রিয় ওই রিয়েলিটি শো-এর সেরা দর্শক হিসেবে দেড় কোটি টাকা জিতেছেন। রাতারাতি বিত্তশালী হওয়ার আনন্দে সারারাত দু’ চোখের পাতা এক করতে পারেননি। একদিন বাদে ফোন পান মনোজ। তাঁকে বলা হয়, ওই পুরস্কারের অর্থ পাওয়ার জন্য বেশকিছু নিয়মাবলী মানতে হবে। সব শর্তে একবাক্যে রাজি হয়ে যান ওই যুবক।
তারপর শুরু হয় প্রতারকদের আসল খেলা। জিএসটি, সেন্ট্রাল ও স্টেট ট্যাক্স-সহ নানা শর্তের কথা জানিয়ে টাকা চাওয়া হয়। টাকা দেওয়ার সেই শুরু। প্রথমে ব্যাঙ্কে জমানো নগদ অর্থ দিতে থাকেন মনোজ। তারপর প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে টাকা পাঠাতে থাকেন। একটা সময়ে নিজেদের বাস্তু এবং জলাজমির সবটাই বিক্রি করে দেন। শুধুমাত্র বসত বাড়িটি বিক্রি করা বাকি ছিল। এখন নিজেদের বলতে শুধু ওইটুকুই রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ আবহওয়ার বিরাট পরিবর্তন! দিঘার আকাশ বদলে গেল মুহূর্তে, জানুন সর্বশেষ পূর্বাভাস
তমলুক সাইবার ক্রাইম আদিকারিকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ১১০ বার পেমেন্ট করেছেন মনোজ মণ্ডল। মোট ৮৫ লক্ষ টাকা খোয়ানোর পর মনোজের মনে হয় তিনি প্রতারিত হচ্ছেন। একটা সময়ে এসে তাঁর উপলব্ধি হয়, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর ময়না থানায় ছুটে যান। সব শুনে পুলিশেরর চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা। পুলিশ অফিসাররা তাঁকে সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন। সেইমতো তমলুক সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ করেন।
সাইবার ক্রাইম থানা তদন্তে নেমে বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট নম্বর ফ্রিজ করে। ন’টি অ্যাকাউন্টে সাড়ে চার লক্ষ টাকা ছিল। পাঁচটি ব্যাঙ্ক থেকে এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা যুবকের অ্যাকাউন্টে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাত্র ১৫ দিন আগে ওই টাকা পেয়েছেন মনোজ। আরও চারটি ব্যাঙ্ক থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা শীঘ্রই ফেরত পাবেন। সম্প্রতি জেলায় সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় জেলার পুলিশ কর্তাদের। তার পর এই ধরনের সাফল্য যা পুলিশের উপর ভরসার পথ খুঁজে পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
Saikat Shee