পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর সকালগুলো এখন হাল্কা চাদরের শীতে মোড়া। সেই হিমেল হাওয়ায় ডানা ভাসিয়ে হাজার হাজার মাইল পার হয়ে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে পূর্বস্থলীর চুপির চরে এসে পড়েছে পরিযায়ী পাখিরা। এখনই সকলের হাজিরা না মিললেও অতিথির সংখ্যা নেহাতই কম নয়। এবার অতিথিরা যখন এসেই পড়েছেন, তখন তাঁদের টানে পর্যটকেরাও তো ভিড় জমাবেন নাকি! তাই পর্যটকদের আপ্যায়ণে ধীরে ধীরে সেজে উঠছে পূর্বস্থলী। বুকিং শুরু হয়ে গেছে এলাকার অতিথি নিবাসগুলোতেও। সব মিলিয়ে আবার একটা শীতের জন্য প্রস্তুত চুপি চর।
advertisement
পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলীর কাষ্ঠশালী গ্রাম। এই গ্রামেই রয়েছে অশ্বক্ষুরাকৃতি এক জলাভূমি। জলাভূমির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে গঙ্গা। গঙ্গা থেকেই অবশ্য এই জলাভূমির উৎপত্তি। তাই স্থানীয়রা আদর করে ডাকেন ছাড়ি গঙ্গা। শীতকালে এই ছাড়িগঙ্গা জুড়েই সংসার পাতে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি।
গত কয়েক বছর ধরেই পরিযায়ী পাখিদের টানে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে চুপি চর। তাই দূর দূরান্ত থেকে আসা এই পাখিদের চোরা শিকারিদের হাত থেকে বাঁচাতে সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রেখে চলেন এলাকার পক্ষীপ্রেমীরা। এবছর কোন পাখি এল, কাদের এখনও আসা বাকি, সে সব খবরই তাঁদের নখদর্পণে।
রেকর্ড বলছে গত কয়েক বছরে চুপি চরে এসে হাজির হয়েছে অসপ্রে, রাডি শেলডাক, স্মল প্র্যাটিনকোল, রিভার ল্যাপ উইং, গ্রে হেরন, পার্পল হেরন, রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড। শীত পড়লেই মধ্য ও উত্তর এশিয়া, ইউরোপ, তিব্বত, সাইবেরিয়া থেকে এই পরিযায়ী পাখিরা হাজারে হাজারে এসে পড়ে পূর্বস্থলীতে। আবার এই রাজ্যের উত্তরবঙ্গ থেকেও কয়েক প্রজাতির পাখি চলে আসে তুলনায় উষ্ণ দক্ষিণ বা মধ্য বঙ্গে খাবার এবং প্রজননের প্রয়োজনে।
পাখি দেখার সবচেয়ে ভাল সময় ভোর ও বিকালে। একটি নৌকো ভাড়া করে বেরিয়ে পড়লেই হল। নৌকো ভাড়া ঘণ্টায় ১৫০ টাকা। এক সঙ্গে চার জন ওঠা যায় নৌকাতে। বাইনোকুলারে চোখ রেখে নানা রঙের নানা আকারের পাখি দেখতে দেখতে সময় কেটে যাবে নিমেষে।