প্রায় শতাধিক বর্ষ পূর্বে ল্যাংচা তৈরি হয়েছিল। এই ল্যাংচার আবিস্কার করেন হেমচন্দ্র ঘোষ। শক্তিগড়ের এই বিখ্যাত ল্যাংচা আবিস্কারের সঠিক সাল জানা না গেলেও কেউ কেউ বলেন ইংরেজির ১৯২৮ সালে আবার কেউ কেউ বলেন বাংলার ১২৯৮ সালে শক্তিগড় ষ্টেশন সংলগ্ন এলাকার মিষ্টি ব্যবসায়ী হেমচন্দ্র ঘোষ প্রথম এই মিষ্টি ল্যাংচা তৈরি করেন। লোক মুখে প্রচারিত ইংরেজি ১৯২৮ সালের আগে বর্ধমানের রাজ পরিবারে বিয়ে হয়েছিল কৃষ্ণনগরের রাজকন্যার। রাজ পুত্র বধূ অন্তঃসত্ত্বা হলে তাঁর মুখের রুচি ফেরাতে হেমচন্দ্র ঘোষকে ভাজা মিষ্টি তৈরি করতে বলা হয়। তিনি তখন পান্তুয়ার মত বিশেষ আকৃতির এই ভাজা মিষ্টি তৈরি করেন। হেম চন্দ্র ঘোষের এই ঘিয়ে ভাজা মিষ্টি পছন্দ হয় রাজ পুত্র বধূর। এরপর এর নামকরণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
advertisement
আরও পড়ুন Rath Yatra 2022: রথে জগন্নাথদেব নেই, আছেন গোপাল, কোন রাজবাড়ি থেকে বার হয় এমন রথ?
পরবর্তীকালে এই মিষ্টি ল্যাংচা নামে অভিহিত হয়। জানা গিয়েছে, বর্ধমানের শক্তিগড় লাগোয়া আমড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন হেমচন্দ্র ঘোষ। হেমচন্দ্র বাবুর একটি পায়ে সমস্যা ছিল। তিনি পা টেনে হাঁটতেন, যাকে লেংচে লেংচে হাঁটাও বলা হয়৷ বর্ধমানের শক্তিগড় রেল ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে আসার মুখেই আজও জ্বলজ্বল করছে বিখ্যাত ল্যাংচা-র দোকানটি। এটিই ভূ ভারতে প্রথম ল্যাংচা আবিষ্কারক হেমচন্দ্র ঘোষের দোকান। যদিও বর্তমানে এই দোকান দুবার হাত বদল হয়েছে। বর্তমানে দোকানের মালিক স্বপন মল্লিক।
স্বপনবাবু জানিয়েছেন, হেমচন্দ্র ঘোষের দুটি মেয়ে। দুটি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর আস্তে আস্তে তিনি দোকান সামলাতে অসমর্থ হলে বাঁকুড়ার বড়জোড়ার বাসিন্দা তাঁর শ্বশুর বাড়ি পান পরিবারের হাতে দোকানের ভার তুলে দেন। এরপর তাঁরাই হেমচন্দ্রবাবুর শেখানো পথেই ল্যাংচা তৈরি চলতে থাকে। কিন্তু কালক্রমে তাঁরাও আর দোকান চালাতে না পারায় বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর স্বপন বাবুরা ১৯৮৮ সাল নাগাদ এই বিখ্যাত ল্যাংচা-র দোকানটি কিনে নেন।
এই দোকানেই এসেছিলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। এমনকি খোদ রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও এই দোকানের মিষ্টি খেয়ে গেছেন। এছাড়াও অসংখ্য অভিনেতা-অভিনেত্রী এসেছেন। শক্তিগড় বাজার এলাকায় রাস্তা সম্প্রসারণ করার জন্য পুরনো সেই ঐতিহাসিক দোকানটি ভাঙা পড়ে। নষ্ট হয়ে যায় বহু দুষ্প্রাপ্য ছবিও যা ইতিহাস সাক্ষী। তিনি জানিয়েছেন, হেমচন্দ্রবাব যে ল্যাংচা তৈরি করতেন তার উপাদান ছিল ছানা, চিনি, গাওয়া ঘি, বড় এলাচ, খাবার সোডা, খোওয়া ক্ষীর, চাল গুড়ি এবং ময়দা। ল্যাংচার জন্য তিনি দুরকম রস ব্যবহার করতেন একটি পাতলা এবং অন্যটি মোটা। আজও সেভাবেই তাঁরা ল্যাংচা তৈরি করেন।
যদিও তিনি জানিয়েছেন, বাজারের পরিস্থিতি অনুযায়ী এখন তাঁরা পাঁচ ও ১০ টাকার দুরকমের ল্যাংচাই তৈরি করেন। হেমচন্দ্রবাবু করতেন তিন থেকে চার রকমের ল্যাংচা। কষ্ট করেও হেমচন্দ্রবাবুর সেই ল্যাংচার গুণগত মানকে আজও বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছেন ল্যাংচার দোকানের বর্তমান মালিক স্বপন বাবু। কিন্তু বাজারের পরিস্থিতির জন্য তাঁরাও ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন।
Malobika Biswas