এরপর আসে ঈশানী নদী। নদীর ওপারে যাওয়ার জন্য ছিল একটি বাঁশের সেতু, কিন্তু সেটিও এখন জলের তলায়। ফেরি সার্ভিস নেই, শুধু কয়েকজনের ব্যক্তিগত ডিঙি নৌকাই ভরসা। কারও নৌকা না থাকলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেই পারাপার হতে হয়। এই গ্রামের বাসিন্দারা এখনও জানেন না যে দুর্গাপুজোর আনন্দটা ঠিক কেমন। গ্রামের বাসিন্দা পরিমল বিশ্বাস বলেন, “আমরা দুর্গাপুজো করতে পারি না। যাতায়াতের খুবই অসুবিধা আমাদের এই ব্রিজ থাকে না ভেঙে যায়। আমাদের খুবই কষ্ট হয় এই গ্রামের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সবাই আনন্দ করে কিন্তু পুজোর কটা দিন আমাদের গ্রামেই বসে থাকতে হয়। বাচ্চা ছেলেরা কান্নাকাটি করে, মনও খারাপ করে কিন্তু কী করব ঠাকুর আনা যায় না।”
advertisement
বিধানপল্লি আসলে এক পুরনো বসতি। একসময় পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষরা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন! চারপাশে ঘন ঝোপজঙ্গল, রাস্তায় নেই আলোর ব্যবস্থা, ঘরে টিমটিমে বৈদ্যুতিক বাতি, সব মিলিয়ে যেন অন্ধকারই এই গ্রামের স্থায়ী সঙ্গী। সাপের ভয়, মৃত্যুর আশঙ্কা এসব সত্ত্বেও সবাই মিলেমিশে এখানে দিন কাটান। গ্রামে একমাত্র বড় উৎসব কালীপুজো। সেই সময়টুকুই গ্রামবাসীর কাছে বছরের সবচেয়ে আনন্দমুখর সময়। ডিঙি নৌকায় করে মাইক ভাড়া আনা হয়, সবাই মিলে রাতভর উৎসব পালন করেন।
কিন্তু দুর্গাপুজো দেখতে হলে গ্রাম ছাড়তে হয়, পাড়ি দিতে হয় দূরের গ্রামে। যেখানে কলকাতার মণ্ডপে কোটি কোটি টাকা খরচ করে থিম আর আলোর ঝলকে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা, সেখানে বিধানপল্লীর মানুষ শুধু দূর থেকে সেই রোশনাই দেখেন আর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এ যুগেও এমন গ্রাম রয়েছে, যেখানে পৌঁছতে হলে যেন জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতেই হয়। আর দুর্গাপুজো? সেটি এখানকার মানুষের কাছে আজও কেবল অধরা স্বপ্ন।