২৫ বছর ধরে খোঁজ ছিল না হিলির পাঞ্জুলের বাসিন্দা কৃষ্ণ মাহাতোর। পরিজনরা ধরে নিয়েছিল তিনি আর নেই। স্বামী মারা গিয়েছে জেনে বিধবা হয়েছেন স্ত্রী ফুলমুনি মাহাত। বাবা নেই জেনেই বড় হয়েছে ছেলে,মেয়ে। নিরুদ্দেশ থাকার ২৫ বছর পর দক্ষিণ দিনাজপুরের পতিরামে রাস্তার ধারে স্বামীকে খুঁজে পেলেন স্ত্রী। স্বামীকে পেয়ে কথা হারিয়েছেন ফুলমনি। বাড়ি যেতেই বাড়িতে ভীড় এলাকার বাসিন্দাদের। ঘটনায় এলাকায় শোরগোল পরে গিয়েছে।
advertisement
বুধবার সকালে পতিরাম থানার পুলিশ কৃষ্ণ মাহাতকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২৫ বছর আগে শুকটা মাহাত ভীনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে সপরিবারে গুজরাত থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। কোন এক স্টেশনে জল নিতে নামেন তিনি। ট্রেন ছেড়ে দিলেও পরিবারের কাছে যাননি তিনি। তাতে পরিবারের সদস্যরা ভেবে নিয়েছিলেন হারিয়ে গিয়েছে হয়তো একদিন না একদিন ফিরবে। একবছর দুই বছর পার হয়ে যাবার পরেও না ফিরলে স্বামী মারা গিয়েছেন এমনটা ভেবে নেন স্ত্রী ফুলমনি মাহাত। বিধবা হয়ে ছোট ছেলে মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি পতিরামে চলে যান ফুলমনি মাহাত। কষ্টে ছেলে মেয়েকে বড় করে তোলেন। তারাও এখন ভীন রাজ্যে কাজ করে।
মা সুমরি ভুইমালির সঙ্গে কাজ করে কোনমতে সংসার চলে। বেশ কিছু দিন ধরে এক ভবঘুরেকে পতিরামে ঘুরতে দেখেন ফুলমনির মা সুমরি ভুইমালি। মুখ ভর্তি গোফ দেখে প্রথমে চিনতে পারে নি নিজের জামাইকে। অবশেষে মঙ্গলবার কাছ থেকে দেখে চিনতে পারেন ২৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া জামাই শুটকা মাহাতকে। মেয়েকে নিয়ে পতিরাম এলাকায় খোঁজাখঁজি শুরু করে। অবশেষে ভবঘুরের বেশে শুটকা মাহাতকে দেখে কান্নায় ভেঙে পরে স্ত্রী ফুলমনি।
ঘটনা শুনে এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পতিরাম থানার পুলিস। খবর দেওয়া হয় কৃষ্ণ মাহাতের পরিবারের সদস্যদের। বুধবার তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। যদিও ৫২ বছর বয়সে এখন মানসিক ভারসাম্যহীন রয়েছেন কৃষ্ণ মাহাত। তিনি কোথা থেকে পতিরামে এলেন, কোথায় ছিলেন, সবই সকলের অজানা।
এদিন কৃষ্ণ মাহাতের পরিবারের সদস্যরা তাঁকে পাঞ্জুলের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়। অন্য দিকে ২৫ বছর পরে স্বামী পেয়ে বাপের বাড়ি ছেড়ে যাবার প্রস্তুতি শুরু করেছেন ফুলমনি। আর বিধবা সেজে নয় এখন থেকে শাখা সিঁদুর পরেই আবার স্বামীর ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে ফুলমনি।
অনুপ সান্যাল