মা-মেয়ে রওনা দিলেন দেবাশীষের বাড়ির দিকে, একটি নতুন সূচনার প্রত্যাশায়। বাড়িতে পৌঁছনোর পরও দেবাশীষের ব্যবহার ছিল শান্ত, সংযত, যেন পুরনো ক্ষত মুছে নতুন অধ্যায়ের শুরু হতে চলেছে। কেউ জানত না, সেই বাড়ির দেওয়ালের মাঝে, বাগানের আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর এক পরিকল্পনা।
আরও পড়ুন: ভারতে বন্ধ হতে চলেছে জনপ্রিয় মদ ওল্ড মঙ্ক! ট্যাক্সে ফাঁকি প্রায় ২০ বছর..! বকেয়া লাখ লাখ টাকা…
advertisement
দিন কেটে গেল, রাত নামল। ১৯ জুলাইয়ের সেই রাতটি নীরব ছিল, বাইরে বৃষ্টি পড়ছিল টুপটাপ। সবাই ঘুমিয়ে, কিন্তু দেবাশীষের মনে তখন চলছিল ঝড়। পুরনো কলহ আর নতুন প্রত্যাবর্তনের অজুহাতে চাপা রাগ যেন আগুনের মতো জ্বলে উঠল। সেই আগুনেই সে পাথর তুলে নিল হাতে। স্ত্রী সোনালী এবং শাশুড়ি সুমতি—দু’জনকেই ঘুমন্ত অবস্থায় পাথর দিয়ে থেঁতলে হত্যা করল।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। রাতের অন্ধকার ও বর্ষার সুযোগে সে মৃতদেহ দুটি নিজের বাড়ির পেছনের লেবু বাগানে টেনে নিয়ে গেল। গর্ত খুঁড়ে পুঁতে দিল দু’টি নিথর দেহ। উপরে কলাগাছ লাগিয়ে দিল যাতে কেউ সন্দেহ না করে।
পরদিন সকাল, দেবাশীষ যেন কিছুই ঘটেনি এমন ভঙ্গিতে পুলিশের কাছে গিয়ে জানাল—স্ত্রী ও শাশুড়ি নিখোঁজ। বলল, তার সন্তানকে দিয়ে তারা ময়ূরভঞ্জ ছেড়ে চলে গিয়েছে। শ্বশুর বাড়ির লোকেদেরও সে একই গল্প শোনাল। কয়েকদিন সে সন্তানকে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনের নাটক চালিয়ে গেল।
কিন্তু একটি ঘটনা তার সাজানো দৃশ্যপটকে ধ্বংস করল। গ্রামবাসীদের কৌতূহল। তারা খেয়াল করলেন, বাড়ির পেছনের লেবু বাগানের মাটি সদ্য খোঁড়া। কলাগাছ হঠাৎ করে লাগানো হয়েছে। সন্দেহ বাড়ল, গুঞ্জন শুরু হল, আর অবশেষে পুলিশে খবর গেল।
পুলিশ এসে দেবাশীষকে জেরা করে। কিছুক্ষণ পরেই ভেঙে পড়ে সে। জানিয়ে দেয় বাগানে মৃতদেহগুলির অবস্থান। যখন মাটি খোঁড়া হয়, তখন উদ্ধার হয় দুটি পচাগলা দেহ—সোনালী এবং সুমতির।
দেহ দুটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে, আর দেবাশীষ এখন পুলিশের হেফাজতে। তদন্ত চলছে এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ জানতে।
গ্রামজুড়ে এখন একটিই প্রশ্ন—কীভাবে একজন মানুষ এতটা হিংস্র হতে পারে? যে মানুষ সম্পর্ক মেরামতির আশ্বাস দেয়, সেই-ই কীভাবে এমন ভয়াবহ মৃত্যু টেনে আনতে পারে? বাগানের সতেজ কলাগাছ যেন এখন প্রতীক এক বিষাক্ত প্রতারণার, যেখানে গাছ নয়, গজিয়ে উঠেছিল এক ভয়ঙ্কর রাক্ষস।