উত্তরবঙ্গের চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চা উৎপাদনে ক্রমশ ভাটা পড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, যেখানে আগে ১০০ কেজি চা পাতা উৎপাদন হতো, এখন সেখানে উৎপাদন নেমে যাচ্ছে ৬০ কেজিতে — প্রায় ৪০% কমে গেছে উৎপাদন। এর বড় কারণ হিসেবে উঠে আসছে বাগান বন্ধ, শ্রমিক সংকট আর খরচ বৃদ্ধির মতো সমস্যাগুলি।
advertisement
বর্ষায় ঘরে-বাইরে কিলবিল করছে সাপ? দরজার সামনে ছিটিয়ে দিন এই ‘গুঁড়ো’! সুরক্ষিত থাকবে পরিবার ও সন্তান!
দার্জিলিং অঞ্চলের বড় চা-বাগানগুলিতে জুন-অক্টোবর মাস সাধারণত মূল উৎপাদনের সময়। রেড ব্যাংক ও সুরেন্দ্রনগর টি স্টেটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুশীল কুমার পাল জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর কথায়, “এই বর্ষা মরশুমে উৎপাদন অন্তত ৪০% কমে গেছে। চা বাগানগুলোতে শ্রমিকদের অভাব, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, আর নানা আর্থিক সমস্যার কারণে বাগান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।”
শুধু উৎপাদন নয়, বিপণনেও মার খাচ্ছে দার্জিলিং চা। কারণ হিসেবে উঠে আসছে প্রতিবেশী নেপাল। স্থানীয় চা ব্যবসায়ীরা বলছেন, নেপালের চা দার্জিলিং চা-র বাজার দখল করছে ক্রমশ। কারণ নেপালের চায়ের দাম দার্জিলিং চা-র তুলনায় ৪০–৫০% কম। ফলে লোকাল মার্কেটে নেপালের চা সহজেই বিক্রি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নেপালের চা মিশিয়ে দার্জিলিং চা নামেই বিক্রি হচ্ছে দেশি বাজারে — এতে দার্জিলিংয়ের আসল চা তার পরিচয় হারাচ্ছে।
এই সংকট শুধু চা বাগানের মালিক বা শিল্পপতিদের নয়, সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ছেন হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার। উৎপাদন কমার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হচ্ছে বাগান, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, পরিকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবারগুলির জীবনধারা — সবই বিপর্যস্ত।
চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা বলছেন, অবিলম্বে সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে আগামী দিনে দার্জিলিং চা-র জৌলুস ইতিহাসে পরিণত হতে বাধ্য। অনেকেই বলছেন, আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেশন, নকল চা বন্ধে কড়া নিয়ন্ত্রণ আর উৎপাদন বাড়াতে সরকারের সহায়তা — এই ত্রিফলা ছাড়া পাহাড়ের গর্বকে বাঁচানো কঠিন।
পাহাড়ের চা শুধু ব্যবসা নয়, হাজার হাজার মানুষের জীবিকা, দার্জিলিং-এর গর্ব আর এই পাহাড়ি পর্যটনেরও অঙ্গ। অথচ সেই চিরচেনা ‘দার্জিলিং চা’-ই আজ হারিয়ে যাওয়ার মুখে! প্রশ্ন একটাই — ‘এই সংকটের গন্ধে কি হারিয়ে যাবে চা-এর সুবাস?’
ঋত্বিক ভট্টাচার্য