চা উৎপাদনকারীদের মতে, ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ের আসল সৌন্দর্য নির্ভর করে প্রকৃতির আশীর্বাদের উপর। মনোরম রোদ আর প্রকৃত বৃষ্টির সংমিশ্রণেই চা পাতার স্বাদ ও গুণগত মান সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছায়। কিন্তু এ বছর সেই স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাঘাত ঘটেছে। সাধারণত, সরস্বতী পুজোর সময় বা জানুয়ারির শেষ দিকে উত্তরবঙ্গে কিছুটা বৃষ্টি হয়, যা চা গাছের বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এবার বৃষ্টির দেখা নেই, ফলে চা বাগান মালিকরা নির্ভর করতে বাধ্য হয়েছেন কৃত্রিম সেচের ওপর।
advertisement
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক বৃষ্টির সঙ্গে মাটির গভীরে থাকা খনিজ এবং অন্যান্য উপাদানের মিশ্রণই চা পাতায় সেই অতুলনীয় স্বাদ এনে দেয়, যা কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। শুধু চা ব্যবসায়ীরাই নয়, শ্রমিকদের মধ্যেও ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ চা পাতার গুণগত মান ঠিক না থাকলে রফতানি এবং বাজারদরেও তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। ইতিমধ্যে গত বছর ফার্স্ট ফ্লাশ ও সেকেন্ড ফ্লাশ চায়ের উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল, যার ফলে বাগানগুলির আয় কমেছে।
উত্তরবঙ্গের এক চা শিল্পপতি বলছেন,”ফার্স্ট ফ্লাশ চা আন্তর্জাতিক বাজারে খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনায় যদি স্বাদ-গুণমান নষ্ট হয়, তাহলে আমরা বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ব।” অন্যদিকে, শ্রমিকরাও চিন্তিত তাদের কাজের স্থায়িত্ব নিয়ে। এক চা শ্রমিকের কথায়,”বৃষ্টি না হলে, ভালো পাতা হবে না। ভালো পাতা না হলে, দামও কমবে। তাহলে আমাদের বোনাস, ওভারটাইম সব কাটা যাবে।”
চা শিল্পের ভবিষ্যৎ আপাতত প্রকৃতির ওপরই নির্ভর করছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যদি স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হয়, তা হলে চা উৎপাদনে বড় প্রভাব পড়বে। ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ের সেই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি স্বাদ ফিরে পাওয়ার একমাত্র উপায় প্রকৃতির আশীর্বাদ—সেই বৃষ্টির অপেক্ষাতেই এখন উত্তরবঙ্গের চা মহল।
সুরজিৎ দে





