মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে কুস্মিতা থাকেন মা রত্না সরকার, দিদা ও ছোট বোন পূজা সরকারের সঙ্গে। বাবা অমল সরকার কাজের সূত্রে বেঙ্গালুরুতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। সংসারের অভাব অনটন ছোট থেকেই দেখেছে কুস্মিতা। পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়িতে টিউশন পড়িয়ে উপার্জন শুরু করে সে। আর মা রত্না সরকার বাসাবাড়ির কাজ করে সংসার চালাতেন।
advertisement
এই উপার্জনেই সংসার চললেও শুধু টিউশনেই থেমে থাকতে চাননি কুস্মিতা। ছোটবেলায় মায়ের হাতের রান্না খেয়েই বড় হওয়া—সেই রান্নাকেই জীবনের হাতিয়ার করে ছয় মাস আগে টিউশন থেকে জমানো পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি করে শুরু হয় ‘মায়ের রান্নাঘর’। প্রথম দিকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে হোম ডেলিভারি দিয়ে কাজ শুরু করে সে। কয়েক দিনের মধ্যেই অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন, ফুড লাইসেন্স সহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র তৈরি করে অনলাইন ও অফলাইন দুইভাবেই অর্ডার নেওয়া শুরু হয়।
নিজের মোবাইল ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভ্লগ ও রিলের মাধ্যমে নিজের কাজ তুলে ধরতে থাকে কুস্মিতা। ধীরে ধীরে সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে এবং ‘মায়ের রান্নাঘর’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে ওঠে। যদিও এই ঝলমলের আড়ালে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম। প্রতিদিন সকালে মায়ের সঙ্গে রান্নার প্রস্তুতি, মা কাজে গেলে একাই অর্ডার সামলানো এবং প্রয়োজনে নিজেই রান্না করতে হয় তাকে।
কুস্মিতা জানায়, সংসারের পরিস্থিতির জন্যই তাকে দায়িত্ব নিতে হয়েছে। তার কথায়, “মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ সবাইকে খাওয়াতেই এই উদ্যোগ। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজটা কঠিন, কিন্তু থামতে চাই না।” ভবিষ্যতে ‘মায়ের রান্নাঘর’কে আরও বড় আকারে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে সে।
বিকেলে মা রত্না সরকার বাড়ি ফিরলে মা-মেয়ে মিলে রাত পর্যন্ত অর্ডার প্রস্তুত করেন। বর্তমানে ঘরোয়া খাবারের স্বাদের কারণে গ্রাহকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে অফিস কর্মী ও একা থাকা মানুষজন বেশি করে অর্ডার দিচ্ছেন। অনলাইন অর্ডার ডেলিভারি বয়ের মাধ্যমে পৌঁছালেও অফলাইন অর্ডার কুস্মিতা নিজেই সাইকেল বা টোটো করে গ্রাহকের বাড়ি পৌঁছে দেন।
এ বিষয়ে মা রত্না সরকার বলেন, সংসারের অভাবের কারণেই মেয়েকে অল্প বয়সে দায়িত্ব নিতে হয়েছে। তবে মেয়ের লড়াই ও আত্মবিশ্বাসে তিনি খুশি ও গর্বিত। তাঁর বিশ্বাস, আজ যে পথে কুস্মিতা হাঁটছে, আগামী দিনে সেই পথ আরও মসৃণ হবে এবং একদিন ‘মায়ের রান্নাঘর’ বহুদূর এগিয়ে যাবে।
অভাব, দায়িত্ব আর সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও দমে যায়নি কুস্মিতা সরকারের স্বপ্ন। শিলিগুড়ির এক ছোট্ট ঘর থেকে শুরু হওয়া ‘মায়ের রান্নাঘর’ আজ শুধু একটি খাবারের উদ্যোগ নয়, বরং আত্মনির্ভরতার এক অনুপ্রেরণামূলক গল্প। মায়ের হাতের রান্নাকে শক্তি করে পড়াশোনার পাশাপাশি যে লড়াই কুস্মিতা চালিয়ে যাচ্ছে, তা প্রমাণ করে ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম থাকলে ছোট পরিসর থেকেই বড় সাফল্যের পথে এগোনো সম্ভব। আগামী দিনে এই উদ্যোগ আরও বিস্তৃত হবে—এমনটাই আশা করছে পরিবার থেকে শুরু করে এলাকার মানুষ।





