গল্পের শুরু প্রায় ৩ মাস আগে। সেই সময় বালুরঘাটের বাওধারা গ্রাম নিবাসী গণেশের স্ত্রী সীতা বর্মন মারা যান। চলতি বছরেই সীতাদেবীর ক্যানসার ধরা পড়ে। তারপর আর বেশি সময় পাওয়া যায়নি। পরিজন ও প্রতিবেশীরা শেষকৃত্য করতে শ্মশানে দেহ নিয়ে যান। কিন্তু দাহকার্যের জায়গায় পৌঁছতে বেগ পেতে হয়েছিল সকলকে। কারণ এই শ্মশানে যাওয়ার রাস্তা ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। ভরা বর্ষায় বেড়ে উঠেছিল ঝোপঝাড়। এর মধ্যে দিয়ে রাস্তা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে।
advertisement
ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে দু’জন কাঁধে করে সীতাদেবীর শবদেহ নিয়ে গেলেও বাকিরা সাপ ও পোকামাকড়ের ভয়ে আর যেতে চাননি। বিষয়টি গণেশবাবুর মনে গভীর দাগ কাটে। এরপর সেই জঙ্গল নিজের হাতে পরিষ্কার করে রাস্তা নির্মাণ করেন তিনি।
এই বিষয়ে গণেশবাবু বলেন, স্ত্রী যখন চিতায় জ্বলছেন, ঠিক তখনই সংগোপনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন- স্ত্রীর স্মৃতিতে এই শ্মশানে এক মনোরম পরিবেশ গড়ে তুলবেন। দূর করবেন শ্মশানে যাতায়াতের সমস্যা। এরপরেই দেরি করেননি তিনি।
প্রথম অবস্থায় গণেশবাবুকে কোদাল হাতে শ্মশানে যেতে দেখে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। পরবর্তীতে কয়েকদিনের মধ্যেই শ্মশানের জঙ্গল পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় কারণটি আন্দাজ করতে পারেন স্থানীয়রা। সকলের চোখের সামনেই শ্মশানের মধ্যে দিয়ে এক রাস্তা তৈরি করে ফেলেন এই প্রৌঢ়।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
এখানেই অবশ্য থেমে থাকেননি গণেশবাবু। এরপর শুরু হয় শ্মশানের সৌন্দর্যায়ন। একে একে বিভিন্ন ফুল ও ফলের চারাগাছ নিয়ে শ্মশানে হাজির হতে থাকেন তিনি। তাঁর এমন উদ্যোগ দেখে গণেশবাবুর দু-তিনজন বন্ধুও সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। ইতিমধ্যেই তিনি বকুল, শেফালি, গাঁদা সহ নানা ফুলের গাছ লাগিয়েছেন। সেই সঙ্গেই রয়েছে আম, রাজকুল সহ বিভিন্ন ফলের গাছ। সরকারি সাহায্য নয়, নিজের জমানো টাকা থেকে গণেশ বর্মনের এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জেলাবাসীর।