কিন্তু সময় বদলেছে। বাজার ভরিয়ে ফেলেছে কারখানায় তৈরি কম্বল, ম্যাট্রেস, রেডিমেড ব্ল্যাঙ্কেট। পুরনো সেই পরিচিত শব্দ এখন মিলিয়ে যাচ্ছে স্মৃতির ভাঁজে। তবুও শীত এলেই শিলিগুড়ির মালাগুড়ি, তুলাপট্টি কিংবা শহরের কোণে-কাছে এখনও দেখা যায় কয়েকজন কারিগরের শেষ লড়াই। তুলো স্তূপ করে, চ্যাপ্টা কাঠের পাটাতনে ধুনতে ধুনতে তাদের হাতের ছন্দে আজও উড়ে বেড়ায় নরম তুলোর রোঁয়া। তারপর সেই তুলো বন্দি হয় রঙিন খোপকাটা কভারের ভেতর, সুঁই-সুতোর সূক্ষ্ম ঘায়ে জন্ম নেয় বাঙালির অতি পরিচিত লেপ-তোষক। আরামদায়ক উষ্ণতার এক পুরনো স্মৃতি।
advertisement
আরও পড়ুন: কাঠের টুলের ওপরে বসেই চোখ ধাঁধানো যোগা! আট বছরের অদ্রীশের তাক লাগানো পারফরম্যান্স
কিন্তু আজ সেই দৃশ্য প্রায় বিলুপ্ত। যারা কাজ করছেন, তাদের অধিকাংশই ভিন জেলা বা রাজ্য থেকে আসা। আর তাদের কণ্ঠেও আজ ঘুরপাক খাচ্ছে হতাশা। শিলিগুড়ির গুড্ডু প্রসাদ বহু বছর ধরে এই পেশায়। কথায় প্রকাশ পায় তার উদ্বেগ। তিনি বলেন, এখন আর পাহাড় থেকে অর্ডার আসে না। আগে নতুন হোটেল বা হোমস্টে খুললেই লেপ-তোষকের চাহিদা থাকত। এখন সবাই রেডিমেড ম্যাট্রেস কিনছে। আধুনিকতার ভিড়ে আমরা হারিয়ে যাচ্ছি। তার ওপর আবহাওয়ার খামখেয়ালি। শীত আসে দেরিতে, যায় তাড়াতাড়ি। সবমিলিয়ে পেটের ভাত জোগানো মুশকিল হয়ে গিয়েছে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
একই সুর শোনা গেল কুড়ি বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত কারিগর নাজির আলামের কণ্ঠেও। তিনিও বলেন, আগে ছ’-সাতজন মিলে কাজ করতাম। এখন দুই-তিনজনও পাওয়া যায় না। নতুন প্রজন্ম আসতে চাইছে না। এই কাজ বাদে কিছুই জানি না। তাই একাই এখনও পড়ে আছি, কিন্তু খুব কষ্টে দিন কাটছে। তবুও, প্রতিদিন শীতের কুয়াশা যখন নেমে আসে শিলিগুড়ির রাস্তায়, তখন কোথাও না কোথাও ধুনার সেই টুপটাপ শব্দ এখনও ভেসে ওঠে। সেটা হয়ত খুবই ক্ষীণ। কিন্তু জানিয়ে দেয়, লেপ-তোষক তৈরির এই শতবর্ষী ঐতিহ্য এখনো পুরোপুরি হাল ছাড়েনি। সময়ের দাপটে লড়াই করে, টিকে থাকার চেষ্টায় এখনও বেঁচে আছে বাঙালির উষ্ণতার সেই পুরনো কারিগরি।





