যে নদী শহরের আশীর্বাদ হতে পারতো, তা আজ অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে শহরের আশপাশে নেই কোনো কলকারখানা, তবুও কেন নদীর জলে বিষাক্ত ব্যকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি? এনিয়ে মহানন্দা বাঁচাও কমিটি পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়।
আরও পড়ুন- আর কাশ্মীর নয়, বাংলার বুকেই এবার ডাল লেক-শিকারা! জেনে নিন 'ঠিকানা'
আদালতের নিয়োগ করা কর্তারা পরিদর্শনও করে গিয়েছেন বারকয়েক। নদীকে বাঁচাতে বহু আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু মেটেনি সমস্যা। নদী খাতেই রয়েছে গরু, মহিষের খাটাল। সঙ্গে নদীর চর দখল করে গড়ে উঠেছে বেআইনি বসতি। সেই বসতির শৌচাগারগুলি থেকে মল-মূত্র সরাসরি মিশছে নদীতে।
advertisement
শহরের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবহৃত নোংরা, আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এই নদীতেই। যার জেরে পাহাড় থেকে আকাবাঁকা খাদ ধরে নেমে আসা মহানন্দা নদীর দূষণ দিন দিন বেড়েই চলছে। নদীর পারেই জঞ্জালের স্তূপ!
যে নদীতে আগে মিলতো উত্তরবঙ্গের বহু প্রজাতির নদীয়ালি মাছ থেকে জলজ উদ্ভিদ, আজ সবই অতীত। মাঝেমধ্যে এই মহানন্দাতেই ভেসে ওঠে মরা মাছ। এই নদীর জল পান করা এখন দূরে থাক, স্নান করা বিপদ। চর্ম রোগের আশঙ্কা রয়েছে।
অবশেষে নড়েচড়ে বসছে নবগঠিত পুরসভা। মহানন্দার দূষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন পুরসভা। এই নদীকে আগের অবস্থায় ফেরাতে বদ্ধপরিকর পুরসভা। নদীখাতেই গড়ে ওঠা খাটাল অন্যত্র সরানোর অনুরোধ রেখেছেন মেয়র গৌতম দেব। শহরের বাইরে তা করতে হবে। তাদের পাশে রয়েছে সরকার।
রাজ্যের ডেয়ারি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়েও কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু পুরসভার নয়া সিদ্ধান্তে বেঁকে বসেছেন খাটাল মালিকেরা। শহরে শ'দুয়েক খাটাল রয়েছে। বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে দিলে তারা স্বেচ্ছায় সরছেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন খাটাল মালিকেরা।
আরও পড়ুন- চলন্ত অটো থেকে চোখের নিমেষে ব্যাগ সাফাই, শিলিগুড়িতে চাঞ্চল্য
পুরসভা বিকল্প জমি দিলেই সরানো হবে খাটাল। না হলে তাদের রুজিতে টান পড়বে বলে দাবী তাদের। ৪০ বছরের বেশী সময় ধরে এই খাটাল রয়েছে মহানন্দা নদীর ধারেই।
তবে পুরসভার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মহানন্দা বাঁচাও কমিটির সাধারন সম্পাদক জ্যোৎস্না আগরওয়াল। ২০২১-এর ১৯ জুন ন্যাশনাল গ্রিণ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছিলেন তিনি। নদীকে বাঁচাতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। একই সুর পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসুর গলাতেও। তাঁর দাবী, ভালো উদ্যোগ। তবে অন্যত্র যেন আবার কোনো নদীর ধারে খাটাল গড়ে না ওঠে।
গত বছরে লোকসভায় দেশের নদী দূষণের কারণ কী, জানতে চান রাজস্থানের সাংসদ নিহালচন্দ্র চৌহান। জবাবে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখওয়াত যে ৩৫১টি নদীর নাম উল্লেখ করেন তার মধ্যে রাজ্যের রয়েছে ১৭টি। আর এই ১৭টির মধ্যে মহানন্দা সহ উত্তরবঙ্গের চারটি নদী রয়েছে। এবার কি মহানন্দাকে বাঁচাতে সত্যিই উদ্যোগী হবে পুরসভা? নাকি ঘোষণাতেই আটকে থাকবে? অপেক্ষায় শহর শিলিগুড়ি।