অন্যান্য শিশুদের মতো সাড়ে তিন মাসের ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য শ্রাবণী তার ছেলেকে নিয়ে গতকাল পাশ্ববর্তী মহামায়া সাব সেন্টারে যায়। সেখানে তাকে আড়াই মাস বয়সী বাচ্চাদের যে টিকা এবং ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা সেই পোলিও ভ্যাকসিন দেওয়া হয় ৩ মাস ১৯ দিন বয়সী শিশুকে। ও পি ডি-২,পেন্টা-২ এবং রোটা -২ সেটা দেওয়া হয়।
advertisement
যদিও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সাড়ে তিন মাস বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে দেওয়ার কথা ও পি ডি-৩, পেন্টা-৩, রোটা- ৩, পি সি ভি -২ এবং আই পি ভি -২ এই সমস্ত ভ্যাকসিন।
শিশুটিকে ভ্যাকসিন দিয়ে ফিরে আসার পর থেকেই সন্ধ্যায় জ্বর আসে ধ্রুবর। সাধারণত ভ্যাকসিন দেওয়ার পর জ্বর হয়, তাই সেরকম কিছু ভাবেনি ধ্রুবর বাবা-মা। রাত ১২ টা পর্যন্ত ঠিকঠাক ছিল ধ্রুব। কিন্তু ভোর চারটা নাগাদ দেখা যায় ধ্রুবর নাক দিয়ে ফেনা জাতীয় কিছু একটা বের হচ্ছে, এমনকী রক্তও বের হয় বলে পরিবারের দাবি। এরপর তড়িঘড়ি তাকে ধূপগুড়ি গ্ৰামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: ইদানীং দেখা মেলাই ভার, মুকুল রায় এবার গেলেন কোথায়! দেখেই চমকে উঠলেন অনেকে
মৃত শিশুর বাবা প্রসেনজিৎ রায় বলেন, ''আমার ছেলেকে বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটার সময় ইনজেকশন দেয়,পোলিও খাওয়ায় সাব সেন্টারে। বিকেল পর্যন্ত ঠিকই ছিল। সন্ধার দিকে তার হালকা জ্বর আসে, ইনজেকশন দিলে জ্বর আসে আমরা জানি। তাই এত চিন্তা করিনি কিন্তু সকাল বেলা যখন ঘুম থেকে উঠে দেখতে পাই যে সন্তান নিথর হয়ে গেছে, নাক মুখ দিয়ে ফেনা বেরিয়েছে। আমাদের সন্দেহ ভ্যাকসিন দেওয়াতে এবং পোলিও খাওয়ানোর জন্য শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে বাড়ি ফিরেই সব শেষ, আত্মঘাতী প্রাথমিকের শিক্ষক!
ওই পরিবারের সদস্য বিকাশ রায় বলেন, ''আমাদের সন্দেহ শিশুটিকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে। তার কান কালো হয়ে গিয়েছে শরীরে কালো ছোপ ছোপ, দাগ হয়েছে। এমনকী নাক দিয়ে ফেনা এবং রক্তক্ষরণ হয়েছে। ভোরবেলা ঘুম ভেঙে যখন ওরকম নাক মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে দেখি, আমরা সাথে সাথে ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
ধূপগুড়ি পৌরসভা বিরোধী দলনেতা কৃষ্ণদেব রায় বলেন, ''যেহেতু ভ্যাকসিন দেওয়ার কারণে শিশুর মৃত্যু বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই গোটা ঘটনার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, কারণ বহু শিশুর ভবিষ্যৎ এর সঙ্গে জড়িত।''
ধূপগুড়ি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরজিত ঘোষ বলেন, ''ভ্যাকসিনের কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ ওই ভ্যাকসিন আরও সাত-আটজন শিশুকে দেওয়া হয়েছে। তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। অন্য কোন কারণে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে গোটা ঘটনা জানিয়েছি। তদন্ত করা হবে এবং ময়নাতদন্ত হলেই মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।''
---রকি চৌধুরী