সূত্রের খবর, একটি ভুয়ো অ্যাপ এবং মিথ্যা চুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও ছোট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া নেওয়া হত। প্রথমে চুক্তির শর্ত মেনে ভাড়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও গাড়ি নেওয়ার পর সেই গাড়ি আর ফেরত দেওয়া হত না। উলটে গাড়িগুলি বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দেওয়া হত বা সীমান্ত পার করে পাচার করে দেওয়া হত। ফলে বহু গাড়ির মালিক একদিকে গাড়ি হারাতেন, অন্যদিকে প্রাপ্য ভাড়ার টাকাটুকুও পেতেন না।
advertisement
রাতের ট্রেনে সবাই যখন ঘুমে অচেতন, চালকরা কী কথা বলেন? ৯৯.৯৯% মানুষ জানেন না এই গোপন কথা!
এই চক্রের তদন্তে ইতিমধ্যেই মূল পাণ্ডা সোমনাথ মুখার্জিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সোমনাথ কলকাতার বাসিন্দা হলেও শিলিগুড়ির চম্পাসাড়ি এলাকায় থেকে এই চক্রের জাল বিস্তার করছিল বলে অভিযোগ। তার কাছ থেকে জেরায় উঠে আসে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সেই সূত্র ধরেই পুলিশের অভিযান চলে একের পর এক জায়গায়। সবশেষে, প্রধাননগর থানার পুলিশের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে আরও ১২টি চোরাই গাড়ি। এই অভিযানে ধরা পড়েছে জাকির হোসেন নামে কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা এলাকার এক ব্যক্তি। পুলিশের অনুমান, এই চক্রটি বৃহত্তর পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত এবং সীমান্ত লাগোয়া জেলাগুলিকে ব্যবহার করেই পাচারের কাজ তারা চলত।
পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রের জাল পূর্ব ভারত জুড়ে ছড়ানো। শুধু শিলিগুড়ি নয়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, এমনকি বিহার এবং উত্তর-পূর্ব ভারতেও এই চক্রের সক্রিয় যোগাযোগ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধে স্থানীয় দালাল ও গাড়ি এজেন্টদেরও ব্যবহার করা হত। পুলিশ ইতিমধ্যেই উদ্ধার হওয়া গাড়িগুলির প্রকৃত মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি আরও কারা এই চক্রে যুক্ত রয়েছে তা জানার জন্য জাকির হোসেনকে জেরা করা হচ্ছে। পুলিশের দাবি, এই মামলায় আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রেফতারি খুব শীঘ্রই হতে পারে।
অন্যদিকে, এই ঘটনার পর গাড়ি মালিকদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেকেই পুলিশি তৎপরতাকে স্বাগত জানালেও একই সঙ্গে গাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। পুলিশও স্থানীয় মানুষকে অবৈধ অ্যাপ বা চুক্তি যাচাই না করে গাড়ি ভাড়া না দিতে অনুরোধ করেছে। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রের মূল অর্থের জোগান, পাচার রুট এবং অন্যান্য সহযোগীদের চিহ্নিত করতে বিশেষ তদন্ত চলছে। একইসঙ্গে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে যাতে চোরাই গাড়ি পাচার রোধ করা যায়। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “এই ধরনের চক্র একা কারও পক্ষে চালানো সম্ভব নয়। পুরো নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে আমরা একাধিক রাজ্যের পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। দোষীদের কাউকে ছাড়া হবে না।”
ঋত্বিক ভট্টাচার্য
