বিগত প্রায় ছয় বছর আগে পাশ করা টেট পরীক্ষার ইন্টারভিউ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দিয়েছেন। কিন্তু তারপরে চাকরি এখনও পর্যন্ত কপালে জোটেনি। কিন্তু পেট তো চালাতে হবে। এখন কামারপাড়া বাজার ও হাটে গেলেই সব্জির পসরা সাজিয়ে বাপিকে দেখা যায়। সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে নিজেই ভ্যান চালিয়ে সবজি নিয়ে আসেন হাটে। তারপর সারাদিন চলে বেচাকেনা। ২০১১ সালে বাদামাইল এলপি হাই স্কুল থেকে ৫৮৯ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেন। দু’বছর পরে উচ্চমাধ্যমিকে ৮১ শতাংশ নম্বর পান। তারপরেই প্রাথমিক শিক্ষকের প্রশিক্ষণ নিতে ভর্তি হন কুরমাইলের সরকারি ডিএড কলেজে। পরে বাংলায় সাম্মানিক স্নাতকে ৬৪ শতাংশ ও স্নাতকোত্তরে ৮৫ শতাংশ নম্বর তার।
advertisement
বাবা বিপুলচন্দ্র দাস একজন সাধারন কৃষক। মা কল্পনা দাস গৃহবধূ। পরিবারের একমাত্র তিনিই পুত্র সন্তান। তার দিদি দীপা দাসের ইতিমধ্যেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এখন সংসারের হাল ধরার একমাত্র মানুষ বাপি। যদিও সব্জি বিক্রির পাশাপাশি তিনি গ্রামের পড়ুয়াদের টিউশন পড়ান। যেখানে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত তার ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। যেখানে বাংলা, শিক্ষা বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্রের মতো বিষয় তিনি পড়ান।
আরও পড়ুন: এ যেন হাতপাখার পাঠশালা! ১২ বছর ধরে বিদ্যুৎহীন স্কুল, তাতেই যা হওয়ার তাই হচ্ছে…
আরও পড়ুন: সপুত্র আরাবুলের বিরুদ্ধে এফআইআর, আইএসএফ কর্মী হত্যাকাণ্ডে বিপাকে তৃণমূল নেতা
প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থী তথা সব্জি বিক্রেতা বাপি দাসের কথায়, ‘সবজি বিক্রি করে কোনও শিক্ষকের কাছে পড়তে যেতে পারতাম না। দোকানে বসেই মোবাইলেই বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে পড়াশোনা করতাম। বাড়ি ফিরে রাতে কিছু বিষয় পড়তাম। অন্যের দুর্নীতির খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে। বিচারব্যবস্থায় তোড়জোড় দেখে সুদিন ফিরবে ভেবেছিলাম। সেখানেও আশার আলো ক্ষীণ হয়ে আসছে। ছয় বছর আগে টেট পরীক্ষায় পাশ করেছি। এই বছর তার ইন্টারভিউ দিলাম। গত বছর পরীক্ষায় পাশ করার পর তার কোনও খবর নেই। এইভাবে আমাদের মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’আমাদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে সরকারের দেখা উচিত বলে মনে করছে দু’বারের টেট উত্তীর্ণ বাপি দাস।
সুস্মিতা গোস্বামী