স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রেসিডেন্সি কলেজে সুভাষচন্দ্র বসু তখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সেই সময়েই কলেজের অধ্যাপক ওটেন সাহেবকে নিগ্রহের অভিযোগে কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছিল তাঁকে। তবে সুভাষচন্দ্র বসু একা নন, একই সঙ্গে বহিষ্কৃত করা হয়েছিল আরও একজন ছাত্রকে। তিনি প্রেসিডেন্সির ষষ্ঠ বর্ষের ছাত্র সুভাষচ্ন্দ্র বসুর অগ্রজ বিপ্লবী অনঙ্গমোহন দাম। ওটেন সাহেবের সঙ্গে ঘটনাটি ঘটে ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। তবে নেতাজী নন, দেশের অপমানের জবাব দিতে সেদিন ওই শিক্ষককে নিগ্রহ করেছিলেন অনঙ্গমোহনই। পরবর্তী কালে তিনি উদ্বাস্তুনগরী অশোকনগরে এসে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেছিলেন। তবে অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অনঙ্গমোহন দামের অবদান আজ কার্যত উপেক্ষিত।
advertisement
আরও পড়ুন : উচ্চতায় টেক্কা আইফেল টাওয়ারকেও! ভূস্বর্গে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে চলেছে চেনাব রেলসেতু
আরও পড়ুন : 'কেষ্ট গেছে খাঁচার ভিতর', অনুব্রতকে নিয়ে 'চড়াম চড়াম গান' বাঁধল রাহুল- নীলাব্জ
স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা এই দেশসেবক কে পুরোপুরি ভুলে গিয়েছে আজকের অশোকনগর। বর্তমান অশোকনগর বাসীদের অধিকাংশ মানুষই জানেন না, তিনি যে অশোকনগরে দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন। অশোকনগরের হাতে গোনা কয়েকজন প্রবীণ নাগরিকদের কাছেই জানাযায়, ওটেন সাহেব কে যে অনঙ্গমোহন দাম ই মেরেছিলেন, তা নাকি সুভাষচন্দ্র বসু একসময় নিজেই জানিয়েছিলেন।সেই প্রেসিডেন্সির ঘটনা নিয়ে অনেক পরে ওটেন সাহেব নাকি বলেছিলেন, তিনি ওই সময় সুভাষকে দেখেননি। শুধুমাত্র বংশীলাল নামে এক বেয়ারার বয়ানের ভিত্তিতে সুভাষচন্দ্র ও অনঙ্গমোহনকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে জানাযায়। অনঙ্গমোহন দাম স্বয়ং লিখেছেন, 'ওটেন পড়ে গেলে আমি ও বিপিন দে তাঁকে দু-চার ঘা দিই। ওই মারামারিতে সুভাষ ছিল না।’ নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘নেতাজি সঙ্গ ও প্রসঙ্গ’ বইটিতেও এই বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে বলে জানাযায়।
সেই সময় কলকাতায় একটি বইয়ের দোকান ছিল অনঙ্গমোহন দাম-দের।দোকানটিকে ঘিরে বিপ্লবী কাজকর্মও চলতো। প্রেসিডেন্সির ঘটনার পর সেই দোকান থেকেই গ্রেফতার করা হয় এই বিপ্লবী কে। প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেলে, ও পরে পাঠানো হয় আসামের জেলে বলে জানা যায়। প্রায় ছয় বছরের জেল জীবনের শেষ পর্বে গৃহবন্দি রাখা হয়েছিল বিপ্লবী অনঙ্গমোহন কে। এরপরই পরিবারের তরফ থেকে বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়তে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হতে থাকে। কিন্তু অনঙ্গমোহন দাম সাফ জানিয়ে দেন, দেশের স্বাধীনতার লড়াই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড়। ভারত ছেড়ে বিদেশে যাওয়ার কোনও ইচ্ছেই তাঁর নেই। জানা যায়, গান্ধীজির ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে পূর্বভারতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অনঙ্গমোহন দাম। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস তখন জেলে। ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় অনঙ্গমোহনের ভূমিকা তুলে ধরে খবর প্রকাশিত হয়েছিল, ‘হু ইজ দ্য ম্যান বিহাইন্ড’। এরপরও, স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছেন এই বিপ্লবী।
জানা যায়, অশোকনগরে থাকাকালীন হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজের প্রতিষ্ঠাতা গর্ভনিং বডির সম্পাদক ছিলেন অনঙ্গমোহন দাম। এলাকার কংগ্রেস নেতা হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। নেতাজির পরিবারের অন্য অনেকের সঙ্গেই কথা হতো এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর। বিশিষ্ট সাংবাদিক সুকুমার মিত্রর কলাম থেকে জানা গিয়েছে, আজীবন বিপ্লবী অনঙ্গমোহন দাম অশোকনগরে উদ্বাস্তুদের বাড়ি ও জমির মালিকানা দেওয়ার আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন। ৮৮ বছর বয়সে প্রয়াত হন অনঙ্গমোহন দাম। তারপর থেকেই এই বিপ্লবীকে আর মনে রাখেনি স্থানীয় মানুষজন। ইতিহাসের পাতাতেও উপেক্ষিতই রয়ে গিয়েছেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত থাকা বিপ্লবী অনঙ্গমোহন দাম।
রুদ্র নারায়ণ রায়






