সবিতার এই অন্ধকার জীবনে, ভরসার লাঠি একমাত্র মা। জানতে ইচ্ছে করছে কে এই সবিতা হালদার! বর্তমানে হাওড়া স্টেশনে ঘোষকের ভূমিকায় কর্মরত উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার মছলন্দপুরের শক্তিনগরের বাসিন্দা এই সবিতা হালদার। স্থানীয় ভূদেব স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তির্ণ হন মেধাবী ছাত্রী সবিতা। তারপর, একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায়, প্রতিশোধ নিতে প্রতিবেশী যুবক সবিতার বাড়িতে এসে প্রথমে চোখে বালি ছিটিয়ে ও পরে দু’চোখে পেরেক ফুটিয়ে চিরদিনের মত কেড়ে নেয় দৃষ্টিশক্তি। সবিতার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে নিভে যায় দু’চোখের আলো। এরপর বহু জায়গায় চিকিৎসার জন্য ঘুরলেও কোন ফল হয়নি। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন কোনও ভাবেই দৃষ্টিশক্তি ফেরানো সম্ভব নয় সবিতার। মানসিক অবসাদ ঘিরে ধরে তাকে।
advertisement
আরও পড়ুন: কী কাণ্ড! সাইকেল চালাতে হলেও লাগবে লাইসেন্স! না হলেই কড়া শাস্তি! কোথায় চালু এই নিয়ম? জানুন
বাবা মন্মথ হালদার পেশায় সবজি বিক্রেতা, মা সীতা হালদার নিতান্তই গৃহবধূ। ঘটনার পর দারিদ্রতায় ঘেরা সংসারে নেমে আসে চরম অন্ধকার। সংসারের হাল ধরতে, নিজের কাছে হার না মানার জেদ থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেন সবিতা। প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করেই রেলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। চলতি বছরেই হাওড়া স্টেশনে যাত্রীদের পথ দেখাতে পাবলিক অ্যাড্রেসে ঘোষকের ভূমিকায় চাকরি মেলে দৃষ্টিহীন এই মেয়ে সবিতার। এখন সকালের ট্রেনে মাকে সঙ্গে নিয়ে সবিতা নিত্যদিন নিয়ম করে পৌঁছে যান হাওড়া স্টেশনের অফিসে।
আরও পড়ুন: ব্যাঙ্কের টাকা চুরি হয়ে যেতে পারে যেকোনও সময়! এখুনি আধার কার্ডে এই বিশেষ লক করুন
সেখানেই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে তাঁর গলায় ঘোষণার মধ্যে দিয়েই পথ দেখান দৃষ্টিহীন রেলের এই মহিলা কর্মচারী। মোবাইলের এলার্ট শুনে, ব্রেইল পদ্ধতি শিখে সময় মেনে আজ অফিসের সব কাজ সামাল দিচ্ছেন দৃষ্টিহীন এই ঘোষক। কাজ শেষে রাত নামতেই মাকে নিয়ে আবারও ট্রেনে করেই ফেরেন বাড়িতে। কোনও দোষ না করেও, অন্ধকার নেমে আসা সবিতার জীবনের লড়াই, বাবা মা ভাই-সহ দারিদ্রতার হালদার পরিবার কে আজ যেন অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করছে। তাই সবিতা হালদার যেন আজ বহু দৃষ্টিহীন মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। অফিসের অন্যান্য সহকারী কর্মচারীরাও সবিতার এই লড়াই দেখে বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। দৃষ্টিহীন সবিতার এই সাফল্যে যেন আজ গর্ব অনুভব করছে গোটা মসলন্দপুর।
Rudra Narayan Roy