উত্তর ২৪ পরগনার বানীপুরে বাণী নিকেতন হাই স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে একটু অন্য ধরনের মাখা খাবার বিক্রি করতেন রবীন ঘোষ। তিনি বিভিন্ন ধরনের কাঁচা সবজি মাখা বিভিন্ন মশলা সহযোগে মেখে খাওয়াতেন তাঁর ক্রেতাদের। লাউ, পটল, ঝিঙে, কাঁচকলা, পেপে সহ নানা সবজি কাঁচা খাওয়ানো হত ভোজনরসিকদের। শুধু কাঁচা সবজি নয়, এই বিক্রেতা কোল্ড ড্রিঙ্ক, কোল্ড কফি এমন কি ম্যাগি মেখে খাওয়াতেন সকলকে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনটাই করা হত। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এই মাখা খাবারের ব্যবসা করে আসছেন।
advertisement
স্কুলের পড়ুয়া আর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তাঁর এই মাখা খাবারের জনপ্রিয়তা সীমাবদ্ধ থাকা পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কোনওভাবে তাঁর এই অভিনব মাখা খাবার কোন একজন তুলে ধরেন সোস্যাল মিডিয়ার প্লাটফর্মে। ব্যাস, সেই থেকে তিনি ভাইরাল হয়ে, পরিচিত হয়ে ওঠেন হাবড়ার 'মাখাকাকু' হিসেবে। তারপর থেকে বিভিন্ন ইউটিউবার থেকে সোস্যাল মিডিয়ায় ক্রিয়েটররা ভিড় করতে থাকেন মাখাকাকুর দোকানে।
প্রথম প্রথম সহজ সরল রবীনবাবু বিষয়টিকে নিয়ে বেশ মজে ছিলেন। ভাইরাল হতেই দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ও বাড়ছিল। ভালোই লাগছিল সহজ সরল এই মানুষটির। পরবর্তীতে বাড়ল উৎপাত। কিছু সংখ্যক ইউটিউবার নিজেদের পেজের ভিউ বাড়াতে টার্গেট করে নেন এই সহজ সরল মানুষটিকে।
মাখাকাকু অভিযোগ করে জানালেন, ইউটিবাররা তাঁকে আরও ফেমাস করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘাস, কচি বাঁশ, গোলাপফুলের পাঁপড়ি মেখে দেওয়ার অনুরোধ জানান। তাঁদের কথা মেনে নিজের পদ্ধতি অনুযায়ী তা মাখা করে দিতে গিয়ে আজ তাঁর করুণ অবস্থা। তাঁরা রং চড়িয়ে ভিডিও বানিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিলেও, নেগেটিভ প্রচারের ফাঁদে পড়ে বিপদে পড়েন মাখাকাকু। স্কুলের সামনে দু'পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। নিগৃহীত হতে হয় এক শিক্ষককেও।
পরবর্তী সময়ে, নানা জায়গা থেকে নানা কটুক্তি শুনে রবীন ঘোষ আজ অসুস্থ। বন্ধ ব্যবসা। বিছানায় শুয়ে আজ তিনি ক্যামেরার সামনে হাতজোড় করে অনুরোধের সুরে জানালেন, চাই না আর সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে। শান্তিতে ব্যাবসা করতে চাই নিজের মতো। হঠাৎই ভাইরাল হয়ে যাওয়া অনেকেই সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে নিলেও, মাখাকাকুর জীবনে ঘটল বিড়ম্বনা। তার উপর ভিডিও করার পর যে নেগেটিভ প্রচার ছড়িয়ে পড়েছে তাতে এই মানুষটি বর্তমানে কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা।
রুদ্র নারায়ন রায়