জানা যায়, তাপস শাণ্ডিল্য পেশায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় দশ বছর আগে কোনও এক সময় তাপস বাবু ও ইন্দ্রানী দেবী মায়াপুর ভ্রমণের সময় সেখানেই প্রাণবন্ত একটি মূর্তি দেখে স্বামীর কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করেন, যদি তিনি স্বামীর আগে মারা যান তবে যেন তাঁর এই রকমই মূর্তি করা হয়। এরপরই, ২০২১ এর মে মাসের চার তারিখ ইহলোক ত্যাগ করেন স্ত্রী ইন্দ্রানী। মৃত্যুর কয়েক মাস পরই, তাপসবাবু ইন্টারনেটে খোঁজ শুরু করেন এমন একজনের যিনি তাঁর স্ত্রী-র ওই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে পারে।
advertisement
তখনই তাপস বাবুর যোগাযোগ হয় সিলিকন শিল্পী সুবিমল দাসের সঙ্গে। এরপরই স্বামী তাপস বাবুর ইচ্ছেকে মান্যতা দিয়ে, প্রায় ছয় মাসেরও বেশি সময় নিয়ে তৈরি করেন সিলিকনের একেবারে হুবহু ইন্দ্রানী দেবীর মূর্তি। ৪৬ বছর বয়সী সিলিকন শিল্পী সুবিমল দাসের তৈরি মূর্তি ইতিমধ্যেই শোভা পায় বিভিন্ন যাদুঘরে। তারপরই কাজ শুরু করেন শিল্পী সুবিমল দাস। মূর্তি তৈরির জন্য বিভিন্ন দিক থেকে ইন্দ্রানী দেবীর মুখের গঠনের প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর একটি মাটির ও ফাইবারের মডেল তৈরি করা হয়েছিল। এরপর ছাঁচের উপর সিলিকন দিয়ে তৈরি করা হয় মূর্তিটি। স্বামী স্ত্রীর কাটানো ৩৯ বছরের স্মৃতি চিহ্ন এছাড়াও স্ত্রী-র শারীরিক গঠনের পরিমাপ জানতে স্বামী তাপস বাবু বারাসাতের এক দর্জির কাছেও গিয়েছিলেন, যেখান থেকে স্ত্রী ইন্দ্রানী দেবী তাঁর পোশাক বানাতেন। সেখান থেকেও সংগ্রহ করা হয় ইন্দ্রানী দেবীর দেহের প্রাথমিক হিসাব।
আরও পড়ুন: বন্দে ভারতের খাবারে ফিস ফ্রাইয়ের আকার দেখলে চোখ কপালে উঠবে! নেটপাড়ায় শোরগোল
স্বামী তাপস সান্দিল্য চেয়েছিলেন, স্ত্রী ইন্দ্রানীর মূর্তির গঠন যেন একেবারে নিখুঁত হয়। শিল্পীর কথায়, ইন্দ্রানী দেবীর গায়ের রং, চুলের এবং চোখের রং ও গরম ফুটিয়ে তোলা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা ফুটিয়ে তুলতে প্রায় ৩০ দিন লেগেছিল বলেও জানান শিল্পী সুবিমল দাস। মূর্তিটি তৈরি করতে আড়াই লক্ষ টাকা মতো খরচ হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। প্রথম অবস্থায় স্বামী তাপস বাবুর, এই মূর্তি তৈরির সিদ্ধান্তে পরিবারের কাছ থেকে বাধা আসলেও, নিজের অনুভূতির কথা তুলে ধরে অবশেষে সেই বাধা অতিক্রম করেন তিনি। করোনা আক্রান্ত হওয়ার সময় স্ত্রী ইন্দ্রানীকে দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, আইসোলেশনে বাড়িতেই ছিলেন তাপস বাবু। সেই কষ্ট আজও ভুলতে পারেননি তিনি। স্ত্রী না থাকলেও আজ তাপস বাবু সিলিকনের তৈরি এই মূর্তিকে নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে চান।
রুদ্র নারায়ণ রায়