ছোট্ট মেয়েকে যে প্রাণে বাঁচাতে পেরেছেন, তাতেই যেন জীবন ফিরে পেয়েছেন তাজমিরা। বিস্ফোরণের পর সামনের বাড়ির সিমেন্টের ছাদের অংশ দেওয়াল উড়ে এসে পড়েছিল। আর তাতেই ভেঙে গিয়েছে ঘরের সামনের অংশ। কষ্টের টাকায় করা নতুন বাড়ি যেন আজ ধ্বংসস্তূপ। শ্বশুর সফিজউদ্দিন আলি ও স্বামী সাহাবুদ্দিন আলি জনমজুরের কাজ করে পেট চালান গোটা পরিবারের। সংসারের টাকা বাঁচিয়ে ধার-দেনা করে মাথা গোজার একতলা দালান বাড়ি করেছিলেন তাজমিরা। বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ সংসার গড়ার সব স্বপ্ন আশা চুরমার করে দিয়েছে।
advertisement
এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ-এর ঘোষণা করা হয়নি প্রশাসন বা সরকারের তরফ থেকে। ইতিমধ্যেই, ধার করা টাকা এখন কী ভাবে শোধ দেবেন তা নিয়েই দুশ্চিন্তার মেঘ তাজমিরার চোখে মুখে। ছ’বছরের মেয়েকে নিয়ে ভাঙা ঘরের মেঝেতে বসে এ কথাই বলতে বলতে যেন চোখের কোনে জল চলে আসছিল ওই গৃহবধুর।
আরও পড়ুনঃ রাজ্যে নতুন ৪টি মিষ্টি হাব তৈরির কথা ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর! কোথায় কোথায় জানুন
বাড়ির সামনে এই বাজি কারখানা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তাঁরাও, কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। বিস্ফোরণের পর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও এখনও যেন সেই মুহূর্ত বারেবারে চোখ বন্ধ করলেই ফিরে আসছে। ছাদে কাপড় মেলে নীচে নামছিল তাজমিরা। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত সামনের ঘরেই খেলছিল ছ’বছরের মেয়ে। হঠাৎ বিকট শব্দ, তারপরই মেয়ের আর্তনাদ। সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নেমে দেখেন চারিদিক ঢেকে গিয়েছে কালো ধোঁয়ায়। কোনওরকমে মেয়েকে কোলে নিয়ে ঝাঁপ দিয়ে বেরিয়ে প্রাণে বাঁচেন দু’জন। এদিনও গিয়ে দেখা গেল পড়ে রয়েছে ভাঙা ঘরের বক্সখাট, সেলাই মেশিন-সহ যাবতীয় আসবাবপত্র। তাজমিরা জানান, প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া চালের ঘরে বাস করতাম। বহু কষ্ট করে এই বাড়ি করা হয়েছে। ১৫ দিন আগে এই বাড়িতে এসেছি। এখনও নতুন বাড়ির ঘরের কাজ বাকি। এরই মধ্যে বিস্ফোরণে ঘর ভেঙল, বক্স খাট, আলমারি, আলনা, সেলাই মেশিন, দরজা, ড্রেসিংটেবল সব শেষ। এখন প্রশ্ন, কে দেবে এই ক্ষতিপূরণ! কী ভাবে শোধ করবেন ধারের টাকা, রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়েছে গোটা পরিবার।
Rudra Narayan Roy