নয় দশকেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত করে ফেলেছে এই পুজোর বয়স। মাতৃ প্রতিমাতেই, এই পুজোর বিশেষত্ব। নৈহাটির বড়মার মূর্তির উচ্চতা ২১ ফুট। এখন চলছে মায়ের মুখমণ্ডল তৈরির কাজ। মাচা বেঁধে সিঁড়ি দিয়ে উঠে কাজ করছেন মৃৎশিল্পীরা। প্রতি বছর কৃষ্ণবর্ণের এই প্রতিমা কয়েক কেজি স্বর্ণালঙ্কারে সেজে ওঠেন। কোজাগরী পূর্ণিমা থেকে এই বড় মা কালীর কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে দেবী মূর্তি গড়ার কাজ।
advertisement
আরও পড়ুনঃ কেষ্ট ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাস, গরু পাচারকাণ্ডে আরও বড় রহস্য ফাঁস!
ভক্তদের বিশ্বাস, নৈহাটির বড়মা খুবই জাগ্রত। মায়ের কাছে কোন কিছু চাইলেই মা ভক্তদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন। আর তাই মায়ের আশীর্বাদ পেয়ে, ভক্তরা নিজেদের সাধ্য মত দান করেন। পুজোর দিন প্রায় কয়েক হাজার ভক্ত দন্ডি কাটেন বলেও জানা যায়। মনের ইচ্ছাপূরন হলে অনেক ভক্তরাই মা-কে অলঙ্কার গড়িয়ে দেন। এ ভাবেই আজ কয়েক কেজি গয়নার অধিকারী হয়ে উঠেছেন বড়মা। মায়ের এই গয়না দেখতেও ভিড় জমে নৈহাটিতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অরবিন্দ রোডের ধর্মশালা মোড়ে আগে রক্ষাকালীর পুজো হত। দেবীকে পুজো করে গভীর রাতেই বিসর্জন দেওয়া হত।পরবর্তীকালে সেই পুজো বন্ধ হয়ে যায়। পরে নদিয়া জুটমিলের কর্মী ভবেশ চক্রবর্তী এই বড় কালীরপুজোর প্রচলন করেন। নৈহাটির অন্যান্য কালী প্রতিমার চেয়ে এই মায়ের মূর্তি উচ্চতায় অনেক বেশি হওয়ায় নাম হয় বড়মা। মা এখানে দক্ষিণাকালী রূপে পূজিতা হন।
আরও পড়ুনঃ জয় পেলেন ভক্তরাই, কালীপুজো নিয়ে আদালতে গড়াল মামলা, পুজো হচ্ছেই
পুজোর রাতে বড়মার ভোগে থাকে পোলাও, খিচুড়ি, পাঁচ রকমের ভাজা, তরকারি, লুচি, চাটনি ও পায়েস। বিসর্জনের আগের দিন, রাতে দেবীকে লাড্ডু ভোগ দেওয়ার প্রথা রয়েছে। যা আজও পালন করা হয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা নৈহাটিতে বড়মার পুজো দিতে ছুটে আসেন। এবছরও কয়েক লক্ষ্য ভক্তদের সমাগম হবে বলেই আশা প্রকাশ করেছেন মন্দির কমিটির পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন।
সারা বছরই মন্দিরে বড়মার নিত্য পুজো হয়ে থাকে। মন্দির কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মায়ের কাছে পুজোর জন্যে যা ফল, কাপড় আসে তা অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রমে বিলি করা হয়। কালীপুজোর সময় ৫০০০ কিলোর বেশি ভোগ রান্না হয়। পুজোয় পাওয়া শাড়ি দুঃস্থদের মধ্যে বিলি করে দেওয়া হয়। মা-কে দেওয়া ভক্তদের বেনারসি শাড়ী গরীব অবিবাহিত মেয়েদের বিয়ের জন্যে দেওয়া হয়ে থাকে। বড়মার কাছে দেওয়া ফল হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় বলেও জানাযায়।
কালীপুজোর দিন থেকে পর পর চার দিন দেবীর বিশেষ পুজো হয়। প্রত্যেক দিন আলাদা আলাদা ভোগ নিবেদন করা হয় মা কে। নৈহাটিতে সবার প্রথমে বড়মার প্রতিমার বিসর্জন হয়। প্রতিমা বিসর্জনেও রয়েছে অভিনবত্ব। মায়ের ও শিবের চক্ষু ছাড়া অন্য সমস্ত সোনার গহনা খুলে নেওয়া হয়। এরপর, ফুলের গহনায় মাকে সাজায়ে তোলা হয়। অবশেষে বিশাল এই প্রতিমাকে ট্রলি করে নিয়ে গিয়ে গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়। এই সময় দেশ বিদেশ থেকেও ভক্তরা আসেন বড়মা কে দর্শন করতে।
রুদ্র নারায়ন রায়