১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি বসিরহাটের স্বরূপনগরে ভারত-বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) কৈজুরি সীমান্তের জিরো পয়েন্টে গড়ে ওঠে এই স্কুল। ৮৪ শতক দানের জমির উপর এই স্কুল তৈরি হয়েছিল। স্বর্গীয় গনেশচন্দ্র মণ্ডল, নির্মল মণ্ডল, জনার্দন মণ্ডল, অমল মণ্ডল, সুদীপ সরকাররা এই স্কুল তৈরির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। তাঁরা গ্রামে ভিক্ষাবৃত্তি, বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে এনে দরমার বেড়া দিয়ে তৈরি করেছিলেন স্কুলটি। পাঁচ জন ছাত্র নিয়ে শুরু হয়েছিল পথ চলা। প্রথমদিকে পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হত। ১৯৬১ সালে নবম-দশমে উন্নীত হয় কৈজুরী বিদ্যালয়। অনেক পরে ১৯৯৯ সালে এটি হয়ে ওঠে কৈজুরী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। শুরু হয় একাদশ-দ্বাদশের পুজো। বর্তমানে এই স্কুলের ছাত্র সংখ্যা ৫০০। ২১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন।
advertisement
আরও পড়ুন: ফেলে যাওয়া খাবার শেষ করতে একই বাড়িতে সকালের পর রাতেও হাজির হাতি!
কলেরা মহামারির জন্য ১৯৬৫ সালে চার মাস এই স্কুল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তবে কৈজুরী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় সময় ১৯৭১ সাল। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় এই স্কুলে ভারতীয় সেনার বেসক্যাম্প তৈরি হয়েছিল। জিরো পয়েন্টের কাছে হাওয়ায় স্কুলের আশেপাশেই একসময় আছড়ে পড়ত পাক সেনার গোলা।
এই বছর ৭৫-এ পা দিয়েছে কৈজুরী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেদিনের আটচলা ঘর আজ তিন তালা পাকা দালানে পরিণত হয়েছে। এই স্কুলের উন্নয়নে বরাবরই সবরকমভাবে এগিয়ে আসেন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। ৭৫ বছরের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, রাজ্য বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসরা। পাশাপাশি প্রাক্তনী ও প্রবীণদের মঞ্চে তুলে একদিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোপাল মণ্ডল বলেন, "কোনও ছাত্র স্কুলে না এলে এখনও আমরা তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিই।" সব মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়েই সামনের পথে দপ্তর করে এগিয়ে যাচ্ছে কৈজুরী উচ্চমাধ্যমিক স্কুল।
জুলফিকার মোল্লা