এক ভাই চলে যান যশোহর, অন্য ভাই কৃষ্ণচন্দ্র দাঁ থেকে যান গোপালনগরে। সেখানেই ব্যবসার পাশাপাশি শুরু করেন দাঁ বাড়ির স্বপ্নে দেখা দেবী মূর্তি কমলেকামিনীর পুজো। এখানে দেড়শ বছরের অধিক এই পুজো হলেও, পরবর্তী সময়ে কৃষ্ণচন্দ্র দাঁ এর পঞ্চম বংশধর অজিত কুমার দাঁ বনগাঁয় প্রচলন করেন এই পুজোর। ঐতিহ্য মেনে এখনো সেই পুজোর আয়োজন হয়ে আসছে।
advertisement
আরও পড়ুন: শিক্ষক দিবসে হঠাৎ বহুরূপী সেজে স্কুলে হাজির প্রধান শিক্ষক, কারণ শুনলে চমকে যাবেন
জানা যায় ধনপতি সওদাগর বাণিজ্য করতে যাওয়ার পথে প্রবল ঝড় বৃষ্টি চলাকালীন সমুদ্রের মধ্যে এক দেবীর দর্শন পেয়েছিলেন। রাজা শালিবান সেই গল্প শুনে, দেবী দর্শন করতে চেয়েছিলেন। এরপর, রাজা ধনপতি সওদাগর কে নিয়ে সমুদ্রে গেলেও, দেবীকে দর্শন করতে না পেয়ে তাকে বন্দী করে রেখেন। পরবর্তিতে, শ্রীমন্ত বড় হয়ে বাবার খোঁজে সেই রাজার কাছে যান। সমুদ্রপথে যাওয়ার সময় শ্রীমন্তও দেবীর দর্শন লাভ করেন।
আরও পড়ুন: ২০ বছর পার, নেন না এক পয়সাও! মিলন মাস্টারের গল্পে চমকে উঠবেন
রাজাকে সেই দেবীর রূপ দেখাতে না পারায়, ক্ষুব্ধ রাজা শ্রীমন্তকে মাঝ সমুদ্রে ফেলে দেন। শ্রীমন্তকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করেন কমলেকামিনী দেবী দুর্গা। মঙ্গলচণ্ডীর সেই কাহিনী থেকেই স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই বংশের সদস্যরা অসুরবিহীন দুহাত বিশিষ্ট এই দুর্গা প্রতিমার পুজো করে আসছেন। দেবীর রূপ এখানে, একহাতে ধরা শ্রীমন্ত ও অন্য হাতে পদ্ম নিয়ে অভয়দায়িনী মা।
১৯৭১ সালে বনগাঁর দাঁ বাড়িতে শুরু হয় কমলেকামিনী রূপে দুর্গার পুজো। জন্মাষ্টমীর দিন থেকে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়। পূজোর বিশেষত্ব বলতে দাঁ বাড়িতে অষ্টমীর দিন কুমারি পূজোর রীতি রয়েছে। নবমীর দিন সকালে ধুনুচি পুরানো হয়। তারপরই হয় নর-নারায়ন সেবা। দশমীর দিনই হয় দেবীর বিসর্জন। এলাকায় এই দাঁ বাড়ির পুজোর আলাদা একটি জনপ্রিয়তা রয়েছে বলেই জানা যায়। পুজোর সময় একবার হলেও এই জাগ্রত দেবীর দর্শন করে যান এলাকার প্রায় সমস্ত মানুষই।
দূর দূরান্ত থেকেও বহু মানুষ আসেন কমলেকামিনী এই দেবীর পুজোয়। পরিবারের আত্মীয়-স্বজন যারা বাইরে রয়েছেন, তারাও পুজোর কটিদিন একসাথেই কাটান আনন্দ করে। পরিবারের সদস্যরা তেমনভাবে কেউই বাইরের ঠাকুর দর্শন করতে পারেন না বলেই জানান। ঐতিহাসিক এই দাঁ বাড়ির পূজোর ইতিহাস আজও মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত গোটা জেলায়।
রুদ্র নারায়ণ রায়





