প্রথমে মনে হয়েছিল, স্ত্রী পরকীয়ার কারণে পালিয়ে গেছে। কিন্তু তদন্তে উঠে এল এক ভয়ঙ্কর সত্য। স্বামী নিজেই খুন করেছে স্ত্রীকে এবং এমন নির্মমভাবে দেহ লুকিয়েছে যা জানলে গা শিউরে উঠবে।
আরও পড়ুন: ইউকে-তে দুই কিশোরীর ওপর ধর্ষণের অভিযোগ! ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে ৯ বছরের কারাদণ্ড
ঘটনাটি বিহারের মুঙ্গের জেলার অসারগঞ্জ থানা এলাকার সাজুয়া গ্রামে ঘটেছে। সাজুয়া গ্রামের কুশওয়াহা টোলার এক যুবক ও যুবতী প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং দু’বছর আগে বিয়ে করেন। তখন মেয়েটির বয়স মাত্র ১৮ বছর ছিল। সে নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিল, সমাজসেবার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু স্বামীর পরিবার এতে বাধা দেয়। এই নিয়ে অশান্তি শুরু হয়। একবার মেয়েটি রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যায়, কিন্তু স্বামী তাকে ফিরিয়ে আনে।
advertisement
কিছুদিন পর হঠাৎই মেয়েটির স্বামী তার শ্বশুরবাড়িতে ফোন করে জানায়, তার স্ত্রী অন্য কারও সঙ্গে পালিয়ে গেছে! কিন্তু মেয়েটির পরিবারের বিশ্বাস হচ্ছিল না। তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানায় এবং তদন্তের জন্য চাপ দিতে থাকে। পুলিশ কেসের গভীরে যাওয়ার পর সামনে আসে এক রোমহর্ষক ঘটনা!
পরে জানা যায়, স্বামী নিজেই খুন করেছে স্ত্রীকে। লাশের দুর্গন্ধ যেন বাইরে না ছড়ায়, তাই সে দেহটিকে বাড়ির শৌচাগারের ট্যাঙ্কের ভেতরে ফেলে দেয়। শুধু তাই নয়, দেহের ওপর মাটি ও খড় বিছিয়ে দেয় এবং তার ওপর সিমেন্টের প্রলেপ লাগিয়ে দেয়, যাতে দুর্গন্ধ বের না হয়!
আরও পড়ুন: নাতির চিতায় ঝাঁপ দিয়ে দাদুর মৃত্যু! তার আগে নাতি যা করেছে, জানুন সেই হাড়হিম করা ঘটনাটি…
পুলিশ যখন ঘটনার তদন্ত করতে বাড়িতে পৌঁছায়, তখন তিন দিন পর শৌচাগারের ট্যাঙ্ক থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। দেহটি মুঙ্গের সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
মৃত তরুণীর নাম অমিশা ভারতী। তিনি বিহারের বাঁকা জেলার শম্ভুগঞ্জ থানার ধর্মপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। দুই বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল আকাশের সঙ্গে, যে মুঙ্গেরের সাজুয়া গ্রামের বাসিন্দা।
বিয়ের এক বছরের মাথায় অমিশা ও তার শ্বশুরবাড়ির মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। তিনি নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন এবং এক বছর আগে তার পরিবার তাকে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের গান্ধী ইনস্টিটিউট অফ নার্সিং-এ ভর্তি করায়। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার পড়াশোনার খরচ দিতে রাজি ছিল না। তারা চাইত, মেয়েটির বাবার বাড়ির লোকজন খরচ বহন করুক। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত।
কিছু মাস আগে অমিশা তার মাকে ফোন করে বলেছিলেন, স্বামী তাকে মারধর করছে। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে।
অমিশার পরিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত শুরু হয়। সন্দেহের ভিত্তিতে পুলিশ স্বামী আকাশকে আটক করে জেরা শুরু করে। কঠোর জেরার পর সে স্বীকার করে যে, সে-ই তার স্ত্রীকে খুন করেছে।
পুলিশ বর্তমানে অভিযুক্ত স্বামী ও তার মাকে আটক করেছে। তবে পরিবারের অন্য সদস্যরা পলাতক। থানার ইনচার্জ ধর্মেন্দ্র কুমার রায় জানিয়েছেন, দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। ফরেনসিক টিমও ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
এই নৃশংস খুনের পেছনে কী কারণ? এই ঘটনা শুধুই পারিবারিক অশান্তির জের, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এক তরুণীর স্বপ্ন ভেঙে দেওয়া, তার ওপর নিষ্ঠুর হত্যার ঘটনা পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে।