কী সেই উক্তি?
২০০৪ সালে প্রথম ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন মনমোহন সিং৷ দশ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পর সম্ভবত দেওয়াল লিখন পড়তে পেরেছিলেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ৷ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের শেষ সাংবাদিক বৈঠকে মনমোহন হয়তো কিছুটা আক্ষেপের সুরেই বলেছিলেন, ‘সংবাদমাধ্যম বা সংসদে বিরোধী দলগুলি আমার প্রতি যতটা নির্দয় হয়েছে, আমি মন থেকে বিশ্বাস করি ইতিহাস আমার প্রতি ততটা নির্দয় হবে না৷’
advertisement
মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুর পর দলমত নির্বিশেষে গোটা দেশের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে অন্যান্য ক্ষেত্রের বিশিষ্ট জন, সাধারণ মানুষ- প্রত্যেকেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণে শোকাতুর৷ যাঁরা একসময় তাঁকে দুর্বলতম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কটাক্ষ করেছিলেন, সেই বিজেপি নেতারাও মনমোহনের মৃত্যুর পর ভারতীয় অর্থনীতিতে তাঁর অবদান স্বীকার করে নিয়েছেন৷ তাঁর পূর্বসূরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মনমোহনকে দেশের শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে অন্যতম বলে শোকবার্তায় উল্লেখ করেছেন৷ মৃত্যুর পর মনমোহন সিং হয়তো প্রমাণ করতে পারলেন, দশ বছর আগে তিনি সত্যিই ভুল কিছু বলেননি৷ ইতিহাস তাঁর প্রতি ততটাও নির্দয় হয়নি৷
সারা জীবন স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ধরে রাখা মনমোহন সিংকেও অবশ্য তাঁর সরকারের আমলে টুজি, কয়লা বণ্টন, কমনওয়েলথ কেলেঙ্কারির জন্য অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল অন্যদিকে একটানা মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যবৃদ্ধির জেরে মনমোহন সিং সরকারের উপরে ক্ষোভ জন্মায় সাধারণ মানুষের৷ শিল্প ক্ষেত্রও মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে নীতি পঙ্গুত্বের অভিযোগ তুলতে থাকে৷ ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যখন মনমোহন সিং আমেরিকা সফরে রয়েছেন, তার মাঝেই ভারতে একটি বিতর্কিত অর্ডিন্যান্স নিয়ে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ্যে আনেন কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধি৷ এই ঘটনার পর বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীও কটাক্ষ করে মনমোহন সিং-কে দুর্বলতম প্রধানমন্ত্রী বলে ফের একবার বিঁধেছিলেন৷ বিজেপি শিবিরের বরাবরই অভিযোগ ছিল, মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হলেও রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে তাঁকে পরিচালনা করতেন তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধি৷
আরও পড়ুন: ‘আর্থিক নীতি নির্ধারণে জোরাল ছাপ রেখে গেলেন’, অগ্রজ মনমোহনের প্রয়াণে শোকবার্তা মোদির
তবে এর বিরোধী মতও রয়েছে৷ ২০০৮ সালে দলনেত্রীর মতের বিরুদ্ধে গিয়েই আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে সই করে নিজের সরকারের ভবিষ্যতই ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছিলেন মনমোহন সিং৷ প্রথম ইউপিএ সরকারের থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে বামেরা৷ তার পরেও অবশ্য ২০০৯-এ ফের ক্ষমতায় ফেরে ইউপিএ সরকার৷ সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়, সিং ইজ কিং৷ একই ভাবে ২০০৯ সালের জুলাই মাসেও নিজের দলের সিদ্ধান্তের কার্যত বিরুদ্ধে গিয়েই পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির সঙ্গে চুক্তি সইয়ের ঝুঁকি নিয়েছিলেন মনমোহন সিং৷
এর পরে অবশ্য টুজি কেলেঙ্কারির মতো দুর্নীতির অভিযোগ, ক্যাগ রিপোর্ট বিপক্ষে যাওয়া, অন্না হাজারের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনস ২০১২ সালে দিল্লিতে নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের মতো একের পর এক ঘটনা কংগ্রেসের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিল৷ টান পড়েছিল জনসমর্থনে৷ যার ফলস্রুতিতে ২০১৪-র ভোটে কার্যত ধুয়ে মুছে গিয়েছিল কংগ্রেস৷ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি দেখেই হয়তো তার কয়েকমাস আগে ওই উক্তি করেছিলেন মনমোহন৷