TRENDING:

পূর্বাঞ্চল জয় থেকে সামাজিক ভিত্তি, এই পাঁচটি বিষয়ে মোদি আমূল বদলে ফেলেছেন BJP-কে

Last Updated:

মোদির তৈরি করা 'নতুন' যে পুরনো বিজেপি-র থেকে আলাদা, তা বোঝা যেতে পারে পাঁচ উপায়ে—

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#নয়াদিল্লি: নরেন্দ্র মোদি বর্তমানে ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী। টানা ৩৫ বছর রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘে (RSS) থাকার পর ১৯৮৭ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি এই রাজনৈতিক দলে যোগ দেন। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ (NDA)-র প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর, তিনি নিজের দলে ব্যাপক পুনর্গঠনের কাজ করেছেন।
advertisement

সারা দেশেই এখন বিজেপি-র রাজনৈতিক আধিপত্যের যুগ—এ কথা বলাই যায়। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে মোদি যখন দলে যোগ দেন, তখন সংসদে মাত্র দু’টি আসন ছিল তাদের। তখনও মোদির নিজের রাজ্য গুজরাতে ক্ষমতায় আসেনি বিজেপি, তখনও সোমনাথ থেকে অযোধ্যা রথযাত্রা শুরু হয়নি। পরবর্তীকালে এই রথযাত্রাই বিজেপি-র জাতীয় সম্প্রসারণের হাতিয়ার হয়ে ওঠে।

advertisement

বিজেপি-তে যোগদানের পর মোদির প্রথম দায়িত্ব ছিল ১৯৮৭ সালের আহমেদাবাদ পুর নির্বাচনের জন্য দলের প্রচারাভিযান সংগঠিত করা। সেই ভোটে জিতেছিল বিজেপি। তবে গুজরাতের বাইরে রাজনৈতিক নেতা হিসাবে মোদি স্বীকৃতি পান ১৯৯০ সালে। এল কে আডবাণী (L.K Advani)-র নেতৃত্বে আয়োজিত সোমনাথ-অযোধ্যা রথযাত্রায় গুজরাতের প্রধান সংগঠক ছিলেন মোদি। ১৯৯১ সালের মধ্যেই জাতীয় সংবাদপত্রগুলি মোদিকে গুজরাতে বিজেপি-র অভূতপূর্ব বৃদ্ধির স্থপতি হিসাবে দেখাতে শুরু করেছে।

advertisement

কিন্তু এত কিছুর পরও ২০১৩ সালে যখন মোদি বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হন, তখনও এটি ছিল একটি শহর-কেন্দ্রিক এবং উচ্চ বর্ণ-প্রধান ব্রাহ্মণ-বনিয়ার দল। ২০১৪ থেকে ২০২২-এর মধ্যে, মোদি বিজেপিকে বিশ্বের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে হিসেবে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি অমিত শাহের (Amit Shah) সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি দলটির একটি মৌল কাঠামোগত পুনর্নির্মাণ করেছেন।

advertisement

মোদির তৈরি করা 'নতুন' যে পুরনো বিজেপি-র থেকে আলাদা, তা বোঝা যেতে পারে পাঁচ উপায়ে—

১. হিন্দি বলয়ের প্রধান গ্রামীণ দল:

২০১৪ সালের পরে বিজেপি-র বাড়বাড়ন্তর একটি বড় কারণ উত্তর ভারতের হিন্দি-ভাষী রাজ্যগুলি। এই সব রাজ্যে প্রধান গ্রামীণ দল হিসেবে পুনর্নির্মাণের জন্যই লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২২৫টি অর্জন করেছিল বিজেপি। এর আগে পর্যন্ত বিজেপি গায়ে নগর কেন্দ্রিক সংকীর্ণ উচ্চ-বর্ণের দলের তকমা দেওয়া ছিল। এ সময়ই তা ব্যাপক ভাবে বদলে যায়।

advertisement

বিজেপি-র গ্রামীণ উন্নয়নের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছবিটি দেখা যায় ভোটের হারের দিকে তাকালে। হিন্দি বলয়ে ১২৭টি গ্রামীণ নির্বাচনী এলাকায়, ২০০৯ সালে বিজেপি মাত্র ১৬.৫ শতাংশ আসনে জয় লাভ করেছিল যা মোট ভোটের মাত্র ৪০ শতাংশ। ২০১৪ সালে, এটি সেই সংখ্যাটিকে তিনগুণ বেশি করে গ্রামীণ আসনের ৫৭.৪ শতাংশ ভোট লাভ করে। ২০১৯ সালে প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৭৪.৮ শতাংশ। বহুমুখী নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পাওয়া যে কোনও দলের কাছে বড় বিষয়। এ থেকেই বোঝা যায় দলটি গ্রামীণ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেছে।

বিজেপি মফসসলের আসনগুলিতেও একই ধরনের বৃদ্ধি দেখেছে। ২০০৯ সালে হিন্দি বলয়ের ৭৯টি মফসসল আসনের মধ্যে, মাত্র ১৩.৯ শতাংশ এলাকায় তারা ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে সেই ভোটের হার গিয়ে দাঁড়ায় ৮২.২ শতাংশে এবং ২০১৯ সালে বিস্ময়কর ভাবে তা পৌঁছয় ৯৪.৯ শতাংশে।

২.জাতের নামে রাজনীতি:

বহু বছর ধরে বিজেপিকে উচ্চবর্ণ-প্রধান দল হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ২০২০ সালের জুনে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রকাশ্যে বলেন, লোকসভায় ১১৩ জন OBC, ৪৩ জন ST এবং ৫৩ জন SC সাংসদ রয়েছে বিজেপি-র তরফে। শতাংশের হিসেবে সংসদে তখন ৩৭.২ শতাংশ OBC, ১৪.১ শতাংশ ST এবং ১৭.৪ শতাংশ SC বিজেপি সাংসদ। এর অর্থ হল যে ২০১৯ সালে নির্বাচিত ৩০৩ জন লোকসভা সাংসদের মধ্যে ৬৮.৯ শতাংশ অর্থাৎ ২০৯ জন সাংসদ ছিলেন অনুচ্চ বর্ণের।

আমি যখন আমার সহকর্মী সঞ্জীব সিং-এর সঙ্গে মিলে ভারতীয় রাজনীতি বিদদের জাত অধ্যয়নের জন্য ‘মেহতা-সিং সোশ্যাল ইনডেক্স’ তৈরি করি, তখন আমরা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এই পরিবর্তনের একটি আকর্ষণীয় দৃষ্টান্ত পেয়েছি।

২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি-র উত্তর প্রদেশ লোকসভার প্রার্থীদের ৫৭.৫ শতাংশ OBC এবং SC, ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই হার ছিল ৫২.৮ শতাংশ, ২০২০ সালে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রী পরিষদের ৪৮.১ শতাংশ এবং বিজেপি-র জেলাস্তরের সভাপতিদের ৩৫.৬ শতাংশ।

মেহতা-সিং সূচক দ্বারা প্রকাশিত এই পরিসংখ্যান দেখায় যে কেন মোদি এবং শাহের অধীনে নতুন বিজেপিকে উচ্চ বর্ণের অধ্যুষিত একটি দল হিসাবে চিহ্নিত করা বিভ্রান্তিকর। বিজেপি, ২০১৩ এবং ২০১৯-এর মধ্যে, শুধুমাত্র তার সামাজিক সমর্থন ভিত্তিই নয় বরং তার অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক ব্যবস্থার পুনর্নির্মাণও করেছে যেখানে ওবিসিদের কেন্দ্রের স্তর দেওয়া হয়েছে।

৩. গরিবের দল:

মোদির অধীনে বিজেপির বৃদ্ধির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দরিদ্র ভোটারদের দ্বারা চালিত হয়েছে। এর বেশিরভাগই একটি নতুন সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচির দ্বারা চালিত। ইউনিক আইডি সিস্টেম, মোবাইল ফোন এবং ডেটা এবং প্রযুক্তি-সক্ষম সরকারি স্কিমগুলির মাধ্যমে সাধিত হয়েছে।

মোদি সরকার ২০১৪ সালে ‘ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার’ (DBT) বা সরাসরি সুবিধা প্রদানের জন্য একটি কাঠামো উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছিল যা আধারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ লাভের ফসল ঘরে তুলেছেন মোদি।

তাঁর সরকার DBT-কে দ্বিগুণ করেছে এবং ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে এটি ১৫-গুণ বেড়ে ৪৩৪টি স্কিমে দাঁড়িয়েছে। সরকারি তথ্য দেখায় যে ২০১৩-১৪ সালে রিপোর্ট করা DBT-এর প্রাথমিক ১০.৮ কোটি সুবিধাভোগী ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে ৭৬.৩ কোটিতে পৌঁছেছে। মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রকৃত অর্থেই সরাসরি নগদ অর্থপ্রদান ২০১৩-14 সালে ৭,৩৬৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০১৮-১৯ সালে দাঁড়ায় ২.১৪ লাখ কোটি টাকায়।এলপিজি, গ্রামীণ আবাসন, শৌচাগার প্রভৃতির জন্য টাকা পাঠানো হয়েছে সরাসরি।

আরও পড়ুন: দেশের প্রতি কর্তব্যে অটল মোদি, নতুন ভারত গড়ার ক্ষেত্রে এই নীতিগুলিই তাঁর মূলমন্ত্র

৪. মহিলা ভোটার:

মোদির নেতৃত্বে বিজেপির বৃদ্ধির একটি উল্লেখযোগ্য চালিকা শক্তি হলেন মহিলারা। ২০০০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত মহিলারা পুরুষদের তুলনায় কম ভোট দিয়েছে এবং বেশিরভাগই বিজেপি-র চেয়ে কংগ্রেসকে বেশি ভোট দিয়েছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনটি ছিল ভারতের ইতিহাসে প্রথম যেখানে নারী ভোটার (৬৭.১৭ শতাংশ) পুরুষ ভোটার (৬৭ শতাংশ) থেকে সামান্য বেশি ছিল। দেখা গিয়েছে, সে বার মহিলারা বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে, বিজেপিকে বেশি ভোট দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: মঙ্গোলিয়ার সাবেক পোশাক থেকে গামছা মাস্ক - বারবার মুগ্ধ করেছেন ‘ফ্যাশনদুরস্ত’ মোদি!

২০১৯ সালে বিজেপি অন্য যে কোনও রাজনৈতিক দলের চেয়ে বেশি মহিলা প্রার্থী দিয়েছে৷ মনমোহন সিংয়ের আগের দু’টি সরকার এবং বাজপেয়ীর এনডিএ শাসনামলের তুলনায় মোদির দু’টি সরকারে গড়ে মহিলা মন্ত্রীদের একটি বড় অংশ ছিল। বাজপেয়ীর (১৯৯৯-২০০৪) অধীনে প্রথম পূর্ণ-মেয়াদী বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিও সরকারে বার্ষিক গড় ৯ শতাংশ মহিলা মন্ত্রী ছিলেন। মনমোহন সিংয়ের ইউপিএ-১ এবং ইউপিএ-২ কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী পরিষদে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব গড়ে ১১.২ শতাংশ ছিল। মোদি শাসনের দুই পর্যায়ে মহিলা মন্ত্রীদের হার বেড়েছে গড়ে ১২.৭ শতাংশ।

শুধু তাই নয়, ২০২০ সালের অক্টোবরে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় আধিকারিক হিসাবে ছিলেন ১৬.৯ শতাংশ মহিলা। এটি CPI(M) (১৪.৭%), তৃণমূল কংগ্রেস (১৩%), CPI (১১.১%), NCP (১০.৮%) এবং কংগ্রেস (৮.৫%)-এর থেকে বেশি ছিল৷ ।

৫. উত্তর-পূর্বের মনোভাব বদল:

মোদির অধীনে বিজেপির সাফল্যের পঞ্চম স্তম্ভ হল হিন্দি বলয়ের বাইরে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা। একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণের কৌশলের পাশাপাশি গভীর কৌশল গত নমনীয়তার মাধ্যমে, বিজেপি নতুন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে যেখানে এর আগে কখনও উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল না।

২০১৪ সালে বিজেপির জাতীয় নির্বাচনে বিজয় স্বাধীনতার পর থেকে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে রাজনৈতিক ক্ষমতার সমীকরণের সবচেয়ে নাটকীয় পুনর্বিন্যাস শুরু হয়েছিল। ২০১৬ সাল পর্যন্ত, দলটি পূর্বাঞ্চলের এই আটটি রাজ্যের কোনোটিতেই ক্ষমতায় নির্বাচিত হয়নি। এমনকী নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানও নিতে পারত না তারা।

কিন্তু ২০২১ সাল নাগাদ পূর্বাঞ্চলের আটটি রাজ্যের ছ’টিতেই জয় আসে। আসাম, ত্রিপুরা, অরুণাচল প্রদেশ এবং মণিপুরে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরা বহু-দলীয় জোটের নেতৃত্বে ক্ষমতায় রয়েছে।

আসাম (দুইবার) এবং ত্রিপুরায় (যেখানে এটি সিপিআই-এমকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল) পার্টির প্রথম জয়গুলি ছিল ঐতিহাসিক ভাবে উল্লেখযোগ্য। অন্য দুটি রাজ্য— নাগাল্যান্ড (৮ মার্চ, ২০১৮) এবং মেঘালয়ে (মার্চ ৬, ২০১৮), বিজেপি বৃহত্তর আঞ্চলিক দলগুলির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে ক্ষুদ্র জোট সঙ্গী হিসাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে, একমাত্র মিজোরাম এবং সিকিমে বিজেপির কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

এ সব এলাকার মানুষের মন কংগ্রেস থেকে বিজেপির দিকে ঘুরেছে, যার প্রতিফলিত দেখা গিয়েছে সংসদেও। ২০১৪ সালে, বিজেপি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাত্র ৩২ শতাংশ (২৫ টির মধ্যে আটটি) লোকসভা আসন জিতেছিল। ২০১৯ সালে তা ৫৬ শতাংশ (২৫-টির মধ্যে ১৪টি)-এ গিয়ে দাঁড়ায়।

বাংলা খবর/ খবর/দেশ/
পূর্বাঞ্চল জয় থেকে সামাজিক ভিত্তি, এই পাঁচটি বিষয়ে মোদি আমূল বদলে ফেলেছেন BJP-কে
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল