কো-উইন অ্যাপেও এসেছে এই বিশেষ প্রতিষেধক নেওয়ার বিকল্প। সূচ ফুটিয়ে টিকা নেওয়ার বদলে এ বার থেকে নাকে ড্রপ দিয়েই নেওয়া যাবে প্রতিষেধক এবং এতে কার্যকারিতাও বেশি বলে দাবি করছেন কিছু গবেষক। বছর শেষের প্রহরে চিন-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করায় আরও একবার টিকাকরণের উপর জোর দিচ্ছে প্রশাসন। আলোচনা চলছে ন্যাসাল ডোজ নিয়েও।
advertisement
কিন্তু সেক্ষেত্রে রয়ে গিয়েছে নানা ধরনের প্রশ্ন। কারা নিতে পারবেন এই প্রতিষেধক। প্রতিষেধক গ্রহণের প্রক্রিয়াই বা কেমন, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। এরই মধ্যে ভারতে কোভিড টাস্ক ফোর্সের প্রধান ডা. এন কে অরোরা জানিয়েছেন, নাসারন্ধ্রে দেওয়া এই প্রতিষেধর প্রথম বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়ার কথা সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থাৎ, কোনও নাগরিক একবার বুস্টার বা সতর্কতা মূলক ডোজ নিয়ে ফেললে তাঁকে আর ন্যাসাল ডোজ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
অতিরিক্ত প্রতিষেধক নেওয়া কোনও কাজের কথা নয়—
চিকিৎসক গবেষকরা গত বছরই দু’টি প্রতিষেধক নেওয়ার কথা বলেছিলেন। তারপর তৃতীয় বুস্টার ডোজ নেওয়ার বিষয়টি সম্মতি পায়। কিন্তু চতুর্থ ডোজ দেওয়ার বিষয়ে তেমন উৎসাহী নন গবেষক চিকিৎসকরা। এনকে অরোরা জানান, 'অ্যান্টিজেন সিঙ্ক' বলে একটি বিষয় রয়েছে। যদি একজন ব্যক্তি বারবার একটি নির্দিষ্ট ধরনের অ্যান্টিজেন টিকা নেন, তবে শরীর প্রতিক্রিয়া দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। এমনকী বিরূপ প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।
আরও পড়ুন: বাগদানের পর আন্তিলিয়াতে গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন, ফুল বিছিয়ে স্বাগত জানানো হল অনন্ত-রাধিকাকে
প্রাথমিক ভাবে এমআরএনএ টিকা ছয় মাসের ব্যবধানে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে, এই ব্যবধান কমিয়ে তিন মাস করে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে খুব বেশি কিছু লাভ হয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে চতুর্থ ডোজের তেমন প্রভাব পড়বে না বলেই এখনও পর্যন্ত মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
ন্যাসাল ভ্যাকসিন যে ভাবে কাজ করে—
নাসারন্ধ্রের মাধ্যমে এই প্রতিষেধক শরীরে প্রবেশ করানো হয়। বিজ্ঞানীদের আশা এটি মিউকোসাল স্তরে কাজ করবে। ভাইরাস যেখানে প্রবেশ করবে, সেই স্তরেই এই প্রতিষেধর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। কোভিডের ক্ষেত্রে নাক ও মুখ দিয়েই সব থেকে বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তাই একেবারে প্রথমেই প্রতিরোধ গড়ে উঠলে তা আর ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে নাসারন্ধ্রে প্রতিষেধক দেওয়ার ফলে শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে।
ভারতীয় ন্যাসাল ভ্যাকসিন—
ভারতে এই মুহূর্তে ভারত বায়োটেকের তৈরি ইনকোভ্যাক নামে একটি ন্যাসাল ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়েছে। এটি অ্যাডেনোভাইরাস ভেক্টরড ভ্যাকসিন।
আরও পড়ুন: মনে শোক নিয়েই রেলের অনুষ্ঠানে মোদি, বাংলা-সহ গোটা দেশের জন্য বিরাট ঘোষণা
ভারত বায়োটেকের তরফে জানান হয়েছে, ইঁদুর, বাঁদরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ChAd-SARS-CoV-2-S ভ্যাকসিনের একটি ডোজ সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে।
সংস্থার তরফে জানা গিয়েছে, এই প্রতিষেধকের মোট পরিমাণ ০.৫ মিলিলিটার। এত প্রতি মিলিলিটারে রয়েছে এনএলটি 5X10 ChAd36-SARS-CoV-S COVID-19 ভাইরাস (পুনঃসংযোগকারী)। এ ছাড়া রয়েছে মধ্যে ট্রিস(pH 7.4), সোডিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড, গ্লিসারল, পলিসরবেট-8-এর মতো পদার্থ।
উপকারিতা—
মনে করা হচ্ছে ইনজেকশনযোগ্য প্রতিষেধকগুলির তুলনায় নাসারন্ধ্রে দেওয়া টিকাগুলির প্রতিক্রিয়া ভাল। প্রায় ৩ হাজার জনের উপর করা ক্লিনিকাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে iNCOVACC এর ২টি ডোজ দেওয়া হয়েছিল ৪ সপ্তাহের ব্যবধানে। এ ক্ষেত্রে বেশ ভাল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখা গিয়েছিল।
ইন্ট্রামিউকোসাল ভ্যাকসিন শ্বাসনালির উপর কাজ করে। কানেকটিকাটের নিউ হ্যাভেনের ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিনের চিকিৎসক-বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন গোল্ডম্যান-ইসরালো জানিয়েছেন, এই স্থানীয় কোষগুলি সংক্রমণের জায়গায় সেন্টিনেল হিসাবে কাজ করে। ফলে আরও দ্রুত প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
ভারত ছাড়াও চিনে এই ধরনের ন্যাসাল ডোজ অনুমোদিত হয়েছে। সে দেশেও বুস্টার হিসেবে চালু করা হয়েছে এই প্রতিষেধক। জানা গিয়েছে, টিয়ানজিনের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা ক্যানসিনো বায়োলজিক্স চিনের ন্যাসাল ভ্যাকসিন তৈরি করেছে।
ভারতে বুস্টারের পরিবর্তে দু’টি ডোজে ন্যাসাল ভ্যাকসিনকে প্রাথমিক টিকা হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।)