মুখে অবশ্য বিজেপি নেতারা বলছেন শিবসেনার ভিতরে চলা এই বিদ্রোহে তাঁদের কোনও ভূমিকাই নেই৷ কিন্তু বিদ্রোহী নেতারা প্রথমে বিজেপি শাসিত গুজরাত, তার পরে অসমে গিয়ে ঘাঁটি গাড়ায় দুইয়ে দুইয়ে চার করতে কারওরই অসুবিধা হচ্ছে না৷
আরও পড়ুন: একেই বলে আনুগত্য! চার কিলোমিটার হেঁটে, লরিতে চড়ে উদ্ধবের কাছে ফিরলেন দলের বিধায়ক
advertisement
একটু পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে এই একই কৌশল কাজে লাগিয়েছে বিজেপি৷ বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির বিক্ষুব্ধ নেতারাই হয়ে উঠেছেন পদ্ম শিবিরের তুরুপের তাস৷ যেমন ২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশে অল্পের জন্য ক্ষমতা দখলে ব্যর্থ হয় বিজেপি৷ সরকার গড়ে কংগ্রেস৷ কিন্তু কমলনাথের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিজেপি-র কাজে লাগায় জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার ক্ষোভকে৷ কারণ কমলনাথ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির জোড়া দায়িত্ব সামলানোয় আপত্তি ছিল সিন্ধিয়ার৷ কংগ্রেসকে রাজ্যে ক্ষমতা ফেরাতেও বড় ভূমিকা ছিল তরুণ এই নেতার৷ কিন্তু কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার ক্রমে গুরুত্ব বাড়তে থাকে কমলনাথের, কোণঠাসা হতে থাকেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া৷
এই সুযোগকেই কাজে লাগায় বিজেপি৷ এমনিতেই সিন্ধিয়ার পরিবারের সঙ্গে বিজেপি-র পুরনো সম্পর্ক ছিলই৷ এসব মিলিয়েই শেষ পর্যন্ত বিজেপি শিবিরের প্রস্তাবে সায় দেন সিন্ধিয়া৷ যার ফলস্বরূপ পতন ঘটে কমলনাথ সরকারের, ভোটে হেরেও মধ্য প্রদেশের ক্ষমতায় ফেরে বিজেপি৷ পুরস্কার স্বরূপ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন সিন্ধিয়া৷
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে দিয়ে অপারেশন মধ্য প্রদেশ সফল হওয়ার পর রাজস্থানে সচিন পাইলটকে নিশানা করে বিজেপি৷ রাজস্থানেও প্রবীণ অশোক গেহলটকে মুখ্যমন্ত্রী করা এবং তাঁকে রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ছিলেন পাইলট৷ প্রায় দু' বছর ধরে এ নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে টানাপোড়েন চলছিল৷ শেষ পর্যন্ত পাইলটকেই দাবার ঘুঁটি করার চেষ্টা করে বিজেপি৷ কথাবার্তাও অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু মধ্যপ্রদেশে কাজটা সহজ ছিল কারণ কংগ্রেস এবং বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যার মধ্যে ফারাক ছিল খুব কম৷ কিন্তু রাজস্থানে এই ফারাকটা ছিল অনেকটা েবশি৷ ফলে শেষ পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দিতে হয় পদ্ম শিবিরকে৷ পাইলটও দল না ছেড়ে কংগ্রেসেই থেকে যান৷ যদিও এখনও তাঁর ক্ষোভ প্রশমিত হয়েছে এ কথা বলা যায় না৷ কারণ পরের নির্বাচনে তাঁঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয় কি না, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন পাইলট৷
আরও পড়ুন: কোভিড আক্রান্ত উদ্ধব ঠাকরে! বিকেলে ভার্চুয়াল বৈঠকেই কি মুখ্যমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ?
মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে একনাথ শিন্ডেকে সেই ভূমিকায় নামিয়েছে বিজেপি৷ মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার বাসনা তো ছিলই, তাছাড়াও দলের প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের কঠোর হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের বিপক্ষে গিয়ে কংগ্রেস এবং এনসিপি-র মতো দলের সঙ্গে জোট সরকার গঠন নিয়েও আপত্তি ছিল শিন্ডের মতো নেতার৷ মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল শিন্ডের৷ কারণ ফড়ণবীশ সরকারেরও মন্ত্রী ছিলেন তিনি৷ সেই সম্পর্ককে কােজ লাগিয়েই শিন্ডের মাধ্যমে শিবসেনা শিবিরে সিঁধ কেটেছে বিজেপি৷
আরও একটি বিষয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নজর এড়ায়নি৷ গত কয়েকদিন ধরেই রাহুল গান্ধি এবং সনিয়া গান্ধির ইডি হাজিরার বিরোধিতায় ব্যস্ত ছিল কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব৷ বিভিন্ন রাজ্য থেকে দলের প্রথম সারির নেতারাও দিল্লিতে গিয়ে পড়ে রয়েছেন৷ তাঁদের এমনও আশঙ্কা ছিল, রাহুল গান্ধিকে হয়তো গ্রেফতার করতে পারে ইডি৷ কংগ্রেস নেতারা যখন ইডি নিয়ে ব্যস্ত, তখন নিঃশব্দে অপরাশেন মহারাষ্ট্র চালিয়ে গিয়েছে গেরুয়া ব্রিগেড৷ একা শিন্ডে নন, তাঁর সঙ্গে আরও প্রায় চল্লিশ জন বিধায়ককে নিরাপদ ডেরায় নিয়ে রাখা হয়েছে৷ জোট সরকার বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত কমলনাথকে দায়িত্ব দিয়েছে কংগ্রেস৷ কিন্তুু সঙ্কট সামাল দিতে কংগ্রেসও অনেক দেরি করে ফেলল কি না, সেটাই এখন দেখার৷
Aman Sharma
