কেন্দ্রীয় বাজেট তৈরির আগে রাজ্য ভিত্তিক প্রত্যাশা ও চাহিদা নিয়ে দলীয় অর্থনীতিবিদ ও প্রাক্তন আমলাদের থেকে মতামত নিতে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এ রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি৷ বৈঠকে ছিলেন সুদীপ্ত গুহ, ধনপত আগরওয়াল ও ভারতী ঘোষ।
আরও পড়ুন: লখনউ, বেনারসে প্রচারে মমতা! উত্তর প্রদেশ নির্বাচন নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত তৃণমূলের
advertisement
খড়গপুরের এম টেক ও হায়দরাবাদের ইনস্টিটিউট অব চাটার্ড ফিনান্সিয়াল অ্যাকাউন্টসের কৃতী সুদীপ্তর মতে, 'নতুন প্রজন্মের কাছে রাজ্যের সম্ভবনা নিয়ে বিরাট সংশয় রয়ছে। এ রাজ্যে বিজেপি-কে গ্রহনযোগ্যতা তৈরি করতে গেলে, বিশেষত নতুন প্রজন্মের কাছে উন্নয়নের দিশা দেখাতে হবে। এ রাজ্যের শিক্ষিত বেকার যুবক, যুবতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।'
সূত্রের মতে, বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে রাজ্যে উড়ালপুল, মেট্রো সম্প্রসারনের মতো প্রকল্পে কেন্দ্রীয় উদ্যোগের জন্য সওয়াল করেছে রাজ্য নেতৃত্ব। এই প্রসঙ্গে সুনিদৃষ্ট ভাবেপাঁচটি মেট্রো প্রকল্পের বিষয়ে বিবেচনার প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্য। সেই তালিকায় রয়েছে শিলিগুড়ি - জলপাইগুড়ি, আসানসোল - দুর্গাপুর, কলকাতা - কল্যাণী, কলকাতা - চুঁচুড়া এবং গড়িয়া - বারুইপুর রুটে মেট্রো প্রকল্পের প্রস্তাব।
আরও পড়ুন: বাংলার ট্যাবলো বিতর্ক থামাতে মমতাকে তড়িঘড়ি চিঠি রাজনাথের! কী আশ্বাসবাণী রাজ্যকে?
পাশাপাশি, রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে এইমস-এর দাবিও জানিয়েছে রাজ্য েনতৃত্ব৷ উত্তরবঙ্গের কোচবিহার ও রায়গঞ্জ এবং জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া বা পুরুলিয়ার জন্য একটি এইমস-এর মতো হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ কেন্দ্রীয় বাজেটে বিবেচনা করার প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্য। তবে, রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্য বিজেপি-র অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের প্রস্তাবগুলির দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, এই প্রস্তাবও রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। বৈঠকে উপস্থিত রাজ্য বিজেপি-র অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এ রাজ্যে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে গভীর সমুদ্র বন্দর থেকে শুরু করে রফতানি বাণিজ্য এবং আইটি সেক্টরে বিনিয়োগ যেমন দরকার তেমনই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সংস্কার ও পরিকাঠমোর উন্নতিতে আসন্ন কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থের সংস্থান করা দরকার।
সুদীপ্তর মতে, এ রাজ্যের উন্নয়নকে কেন্দ্রীয় বাজেটে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হলে প্রথামাফিক ধ্যান ধারণার পরিবর্তন দরকার। এ রাজ্যের জনমানসে দলের ভাবমূর্তি নিয়ে ধন্দ না কাটলে রাজ্যে বিজেপি-র পক্ষে লড়াই করা কঠিন হবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে মমতার সাফল্যের পিছনে একাধিক সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলাদের হাতে সরাসরি আর্থিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া মমতার ''মাস্টার স্ট্রোক " বলে মানতে হয়েছে বিজেপিকে। কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী থেকে শুরু করে দুয়ারে সরকার-এর মতো মমতার প্রকল্পের মোকাবিলা করতে পারেননি নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা।
অন্যদিকে জঙ্গলমহল, উত্তরবঙ্গের বঞ্চনার দাবি তুলে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে সাফল্য পাওয়ার পর, এলাকার মানুষের কাছে প্রত্যাশার ছিঁটেফোঁটাও এনে দিতে পারেনি বিজেপি। ফলে, বিজেপি-র স্থানীয় সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিরা বুঝতে পারছেন, বিজেপি সরকার করতে পারেনি, এই অজুহাতে আর চিঁড়ে ভিজবে না। পরিবর্তনকামী বিজপি প্রভাবিত এলাকায় হাওয়া ঘুরতে শুরু করেছে। ফলে, ২০২৪-এর দিকে তাকিয়ে রাজ্যের জেতা ১৮টি সংসদীয় এলাকায় বিজেপি-র জমি যথাসম্ভব ধরে রাখতে হলে, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামোর মতো ক্ষেত্রে রাজ্যের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটে সংস্থান বাড়াতে হবে।