অসমের মোরিগাঁও জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নারায়ণ কোনওয়ারের। তীব্র অভাব-অনটনে দিন কাটত তাঁর। রোজকার খাবারটুকু জোগাড় করতেও রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠত তাঁর পরিবারের। বাবা এক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর আয় পর্যাপ্ত ছিল না। আর খুব কম বয়সেই হারিয়েছিলেন বাবাকে। ফলে কোনওয়ার এবং তাঁর মায়ের পক্ষে জীবনযাপন করাই মুশকিল ছিল। সেখানে এই পড়াশোনা চালানো তো বিলাসিতা মাত্র!
advertisement
বাবার মৃত্যুর পরে কোনওয়ারের মা দিনমজুরির কাজ নেন। এর পাশাপাশি সবজি এবং অন্যান্য সামগ্রীও বিক্রি করতেন। আর মাকে যথাসাধ্য সাহায্যও করতেন কোনওয়ার। পড়াশোনার সময় বার করলেও কঠোর পরিশ্রমের পরেও দ্বাদশ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হতে পারেননি তিনি। মূলত দারিদ্র্যই পড়াশোনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আরও পড়ুন: বাজারে দেখেও এই ফলটি কেনেন না? বহু বড় রোগের যম! কমে যাবে চুল পড়াও
ছেলেবেলার স্মৃতি হাতড়ে কোনওয়ার বলেন, “আমাদের আর্থিক অবস্থা সঙ্গিন ছিল। খিদে মেটানোরই টাকা ছিল না। আর বাবার মৃত্যুর পর তো অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমাকে মানুষ করার জন্য প্রচুর খাটতে হয়েছিল মা-কে। নগাঁও-এর এডিপি কলেজে যোগ দেওয়ার আগে পর্যন্ত আমার মাকে রাস্তায় সবজি বিক্রি করতে হত।”
আরও পড়ুন: ছিঃ! দিঘার ঝাঁ চকচকে হোটেলের আড়ালে এ কী চলছিল! ফল ভুগছিলেন পর্যটকরা
যদিও শৈশবে দারিদ্র্যের কাছে মাথা নোয়াননি কোনওয়ার। বরং পড়াশোনার পাশাপাশি রোজগারও চালিয়ে গিয়েছেন। রাস্তার ধারে পাঁপড় ভাজা, ছোলা ভাজার মতো টুকিটাকি খাবার বিক্রি করতে শুরু করেন। অবশেষে দ্বাদশ শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষায় কৃতকার্য হন তিনি। তবে এর মধ্যেই উলফা গোষ্ঠীতে নাম লেখানোর ইচ্ছা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
এই প্রসঙ্গে কোনওয়ার বলেন, “আমি যেখানে থাকতাম, সেটা উলফা গোষ্ঠীর অন্যতম ঘাঁটি। প্রতিদিন আমরা সশস্ত্র উলফা সদস্যদের দেখতাম। ফলে ওই গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার কথা মনে হয়েছিল। আসলে আমার সহপাঠীও ওই গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিল।”
পরে কোনওয়ার স্থানীয় কলেজ থেকে সেকেন্ড ক্লাস পেয়ে স্নাতক হন। এরপরে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্স্ট ক্লাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতকোত্তর হওয়ার পরে নগাঁওয়ের এডিপি কলেজে লেকচারার পদে যোগ দেন কোনওয়ার। সেই সময়ই সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় বসার কথা মাথায় আসে। সেইমতো প্রস্তুতিও শুরু করেন। প্রথম প্রয়াসেই অবশ্য সাফল্য আসেনি। এরপর ২০১০ সালে ইউপিএসসি-তে দারুণ সাফল্য পান তিনি।