নচিকেতার এই বিখ্যাত গানের মধ্য দিয়ে বৃদ্ধ মা-বাবার ভয়ঙ্কর দুরবস্থা এবং তাঁদের প্রতি সন্তানদের অবহেলার করুন ছবি ফুটে উঠেছিল। নদিয়ার শান্তিপুরের বাগআঁচড়া গ্রামের বৃদ্ধা নীলা শিকদার যেন নচিকেতার বৃদ্ধাশ্রম গানের হুবহু প্রতিচ্ছবি। ছেলে-মেয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হলেও ৯০ বছরের বৃদ্ধা নীলাদেবীর ঠাঁই হয়েছে গ্রামের খেলার মাঠে। তাঁর স্বামী বহু বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন।
advertisement
আরও পড়ুন: সংসার সামলে চুন তৈরি করছেন বাড়ির বধূরা
গ্রামবাসীদের থেকে জানা গিয়েছে, নীলাদেবীর স্বামী জনমজুরের কাজ করতেন। তাই অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনমতে সংসার চালিয়ে ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন। মেয়ের বিয়েও দেন। জানা গিয়েছে, বাবার সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার পরই মাকে দেখার ভয়ে পৈত্রিক ভিটে ছেড়ে শান্তিপুর শহরে এসে থাকেন এক ছেলে। অপর ছেলে পঙ্কজ শিকদার নীলাদেবীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ। তিনি অবশ্য ভিন রাজ্যে কাজ করেন। তাই বলা ভাল তাঁর স্ত্রী শাশুড়িকে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ির থেকে বের করে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে ওই মহিলার বক্তব্য, শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করতেন।
সেই থেকেই বাড়ির পাশে খেলার মাঠে আশ্রয় নেন ওই বৃদ্ধা। সেখানে তিনি নিজেই রান্না করে খান। যেদিন খাবার জোটে সেদিন খান, না জুটলে না খেয়েই দিন কাটান। তবে তাঁর এই অসহায় অবস্থা দেখে প্রতিবেশীরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রূপালী বিশ্বাস জানান, এই বিষয়টা নিয়ে বৃদ্ধার ছেলের সঙ্গে অনেক বার কথা হয়েছে। কিন্তু ওনার ছেলে কোনমতেই বাড়িতে তুলতে রাজি নন। যদিওবা এর আগে পঞ্চায়েতের চাপে মাকে বাড়িতে নিয়েছিলেন, কিন্তু মারধর করে পুনরায় বের করে দেন।
বাগআঁচড়া মহিলা সমিতির সভাপতি শিখা বিশ্বাস জানান, এর আগেও একবার ওই বৃদ্ধাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছিল ওনার বৌমা। তখন আমরাই গিয়ে ওই বৃদ্ধাকে চিকিৎসা করিয়ে আবার বাড়িতে তুলে দিয়ে এসেছিলাম। বুঝিয়েছিলাম মা-বাবা বৃদ্ধ হলে শিশুর মতন হয়ে যান। মাতৃ গর্ভের সন্তান হিসাবে অন্তত যেন মানিয়ে নিয়ে থাকেন। কিন্তু আবারও বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছে। এ বিষয়ে শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ পর্যন্ত করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পুলিশ যদি কড়া মনোভাব নিয়ে ওই বৃদ্ধাকে তাঁর নিজস্ব বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন এবং ছেলে-বৌমার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয় তবে হয়ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।
মৈনাক দেবনাথ