হঠাৎ তাঁর নজরে পড়ে এক গোপবধূর দিকে।যাঁর গায়ের রঙ মিশমিশে কালো।কিন্তু তাতে কী? তাঁর রূপে যে আছে অপরূপ লাবণ্য। কর্মব্যস্ত বধূকে দেখে থমকে গেলেন কৃষ্ণানন্দ। ডান পা সামনে বাড়িয়ে বাঁ হাতে একতাল গোবর নিয়ে ডানহাতে কুটিরের মাটির দেওয়ালে ছুঁড়ে প্রলেপ দিচ্ছেন সেই গোপবধূ। একরাশ ঘন কালো চুল। কোমর ছাপিয়ে হাঁটু ছুঁইছুঁই। পরনে খাটো বস্ত্র। কিছুটা যেন সম্মোহিত হয়ে তাঁকে দেখে কৃষ্ণানন্দ দাঁড়িয়ে পড়লেন সেখানে।
advertisement
এমন সময়ে হঠাৎ পিছন ফিরে ভট্টাচার্য মশাইকে দেখে হতচকিত হয়ে পড়েন সেই বধূ। কৃষ্ণানন্দ তাকিয়ে দেখেন, উজ্জ্বল চোখ দুটি বড় মায়াময়।সারা মুখ জুড়ে পরিশ্রমের ঘাম জমেছে বিন্দু বিন্দু।কপালের সিঁদুর ধেবড়ে ছড়িয়ে গিয়েছে দুই ভ্রু জুড়ে। কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ভট্টাচার্যকে দেখে বিব্রত বধূ নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করতেই তাঁর পরনের স্বল্পবাসটুকুও গেল খসে। দু’হাতে গোময়। লজ্জায় জিভ কাটলেন নিরুপায় সেই রমণী।স্থান-কাল-পাত্র সব ভুলে গিয়ে সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ মাধুরী মিশিয়ে দেখতে লাগলেন তাঁর ইষ্টদেবী কালীকার অধরা রূপটি। দেবী ঘোর কৃষ্ণবর্ণা,আলুলায়িত কেশরাশি। গোবরের তাল ধরা ডানহাতে যেন বরাভয়ের মুদ্রা।বাঁ হাতে খড়্গ।জীবজগতের মঙ্গল এবং আসুরিক শক্তির বিনাশের জন্য যা সদা উদ্যত। দু’চোখে অপার করুণা। কপাল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সিঁদুর যেন তৃতীয় নয়ন।
আরও পড়ুন: অন্য পুজো! ১২৫ ধরে বাড়ির বড় বউমাকেই কালী রূপে পুজো করা হয়! ভিডিও অবাক করবে
কথিত আছে , সেই থেকেই শুরু হয় কার্তিকী অমাবস্যায় শ্যামামাতা পুজোর প্রচলন। নবদ্বীপের আগমেশ্বরী পাড়ায় আগমবাগীশের পঞ্চমুন্ডির আসনে তাঁর প্রচলিত পদ্ধতিতেই আজও কালী পুজো হয়ে চলেছে। অনেকেরই মতে, এটাই নাকি প্রথম এবং প্রাচীনতম দক্ষিণাকালী।
Mainak Debnath