বাংলার প্রত্যন্ত জেলা থেকে ফুটবল প্রতিভা তুলে আনার লক্ষ্যে আইএফএ-এর সঙ্গে যৌথ স্পোর্টস ভেঞ্চারে যোগ দেয় স্পেনের ফুটবল ক্লাবে। আগামী সেপ্টেম্বরে স্পেনের মত্রিল ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন প্রেমাংশু ঠাকুর( ডিফেন্ডার)। স্পেনের মন্ট্রিল অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষক ফেরেন্দ তোরেস ও বাংলার প্রথম প্রো লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রশিক্ষক শংকর লাল চক্রবর্তী এই বাছাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
advertisement
আরও পড়ুন- কলকাতার আকাশে চক্কর কাটল সংযুক্ত আরব আমিশাহির যুদ্ধ বিমান, এ কীসের ইঙ্গিত!
শুক্রবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের তাঁবুতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইএফএ চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত, সচিব অনির্বাণ দত্ত, কোষাধক্ষ্য দেবাশীষ সরকার, সহ সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস ৷
ছেলের সাফল্যেও কষ্টের স্মৃতি ভুলতে পারেননি মা দুর্গা সরকার । তিনি জানান, শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে ‘তাড়িয়ে’ দেওয়া হয়েছিল। বাবার বাড়িতে ফিরে ছোট্ট প্রেমাংশুকে বুকে আগলে , দাঁত চেপে লড়াই শুরু করেছিলেন মা। ছেলের পড়াশোনার জন্য নিয়েছিলেন অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ। পরিচারিকার কাজ করে ছেলের খাওয়া-দাওয়া ও পড়াশোনার খরচ সামলেছেন। সরকারি চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন ছেলে, এমনটাই ছিল স্বপ্ন। কিন্তু ছেলের স্বপ্ন ফুটবল। হাজার বকাবকি ও শাসনেও প্রেমাংশুর পা থেকে ফুটবল ছাড়াতে পারিনি মা।
টিফিনের পয়সা জমিয়ে জুতো কিনে খেলা শুরু। দিদির জমানো টিউশনে টাকা চুরি করে প্রথম ফুটবল কেনা। স্কুল পালিয়ে ফুটবল প্র্যাকটিস- ফুটবলের প্রতি অমোঘ ভালবাসা আজ সাফল্য দিয়েছে প্রেমাংশুকে। সাফল্য শেষেও কষ্টের স্মৃতির দগ দগে ক্ষত আজও টাটকা দুর্গার মনে। দুর্গা বলেন, ‘‘ছোটবেলায় নিজে না খেয়েও ছেলেকে বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। সারাদিন অন্যের বাড়ি কাজ করতাম , রাতে বিড়ি বাধতাম। কিন্তু ছেলের পড়াশোনায় একটুও মন ছিল না। সারাদিন ফুটবল নিয়ে পাগলামি করত। কষ্ট হতো, ভয়ও পেতাম। কী করে খাবে? কী হবে ওর ভবিষ্যৎ? আজ ওর সাফল্যে আমি শুধু গর্বিত না , অনেক স্বস্তিতে ৷ ’’
চলছে পাসপোর্ট তৈরির তোড়জোড়, নাগাড়ে চলছে প্র্যাকটিস, আর কয়েক মাস বাদে পাড়ি জমাবেন স্পেনে। নিজের ফুটবল দক্ষতার দাগ কাটতে চান স্পেনীয় কোচদের মনে, সাফল্যে আনতে চান ভারতীয় ফুটবলে। ফুটবল পাগল প্রেমাংশু জানালেন, ‘‘আমার জন্মের পর মাকে ছেড়ে গিয়েছিল বাবা। আমি এমন সাফল্য অর্জন করতে চাই, যাতে আমাদের ছেড়ে দেওয়া নিয়ে বাবাকে আফশোস করতে হয়। আর এই প্রতিশোধের অস্ত্র একমাত্র ফুটবল। খুব ভাল ফুটবল খেলে দেশের ও পশ্চিমবঙ্গের নাম উজ্জ্বল করতে চাই ৷ ’’
মৈনাক দেবনাথ