এদিকে কান দিতে শতাধিক বছরের পুরোনো রথ বের হয়। তবে এই রথের বৈশিষ্ট্য হল এখানে বলভদ্র ও সুভদ্রা রথে চাপেন না। একমাত্র প্রভু জগন্নাথ দেব রথে চেপে নগর পরিক্রমা করে শেষে মাসির বাড়ি গিয়ে হাজির হন। কান্দির এই বিখ্যাত রথযাত্রা উৎসবে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ যোগ দিয়েছে। মঙ্গলবার এই রথযাত্রার উদ্বোধন করেন কান্দি পুরসভার পুরপ্রধান জয়দেব ঘটক।
advertisement
আরও পড়ুন: ধসে যাচ্ছে বাঁধ, যে কোনও সময় ভেসে যেতে পারে গ্রাম
রথে মুর্শিদাবাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ হল লালবাগের নশিপুর আখড়ার ২৫৩ বছরের প্রাচীন রথ। এই রথটি রুপো দিয়ে তৈরি। নবাবি আমলে হাতির পিঠে এই রুপোর রথ চাপানো হতো। তার ভিতর বসে থাকতে প্রভু জগন্নাথ দেব, বলভদ্র ও সুভদ্রা। এভাবেই তাঁরা মাসির বাড়ি যেতেন। তবে এই মাসির বাড়ি আবার যার তার বাড়ি ছিল না। তা ছিল বাংলার ইতিহাসের অতি পরিচিত চরিত্র জগৎ শেঠের বাড়ি। সেইসব ইতিহাস হয়ে গেলেও আজও সেই রথ রাস্তা পরিক্রম করে। ১১৬৮ বঙ্গাব্দে স্বামী রামানুজের শিষ্য লছমন দাস ও মনসরাম দাস ধর্ম প্রচারের জন্য মুর্শিদাবাদে এসে নশিপুরে এক আখড়া স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তারাই রথযাত্রার সূচনা করে। সেই প্রথা আজও চলছে।
অন্যদিকে প্রায় ২০০ বছর আগে কান্দির তৎকালীন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সিংহ ওরফে লালাবাবু নীলাচল পুরির আদলে কান্দি রাধাবল্লভ জিউর মন্দিরে রথ যাত্রার প্রচলন করেছিলেন। দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী কান্দির এই রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়ে আসছে। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মে কিছু বদল এসেছে। আগে কান্দির রাজবাড়ি সংলগ্ন জগদীশ সিংহর বাড়িতে রথের পর আট দিন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে রাখা হতো। এটাকেই বলা হতো মাসির বাড়ি। তবে সেই মন্দির ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় বর্তমানে রাধাবল্লভ জিউর মন্দিরের একটি পৃথক ঘরকেই এই আট দিন অস্থায়ীভাবে মাসির বাড়ি হিসেবে তৈরি করা হয়। সেখানেই থাকেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা।
কথিত আছে, কান্দির রাজার শুরু করা এই রথ দেখার জন্য শুধু কান্দিবাসী নয়, আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে গরুর গাড়িতে করে বহু মানুষ আসতেন। রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে গত দুই শতক ধরে এই মন্দির প্রাঙ্গনে মেলা বসে আসছে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রায় শামিল হতে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই ভিড় জমে যায় রাধাবল্লভ জিউর মন্দিরে।
কৌশিক অধিকারী