কথিত আছে, কান্দি রূপপুরের রুদ্রদেবের গাজনে এই দিকটি বিশেষভাবে ধরা পড়ে। রুদ্রদেব অক্ষোভ্য বুদ্ধ। বজ্রযানে ও সহজযানে অক্ষোভ্যকুলের গুরুত্ব অপরিসীম। অক্ষোভ্যকুলের দেবদেবীগণ ঘন নীলবর্ণ; প্রজ্ঞার মূর্ত প্রতীক। একজটা, পর্ণশবরী, হেবজ্র, আর্যজাঙ্গুলি, মহাচীনতারা, যমান্তক, মহাকাল, চর্চিকা, নৈরাত্মার উপাসনার পথে; উড্ডিয়ানের সাধকদের বিশিষ্ট সাধনক্রমের মাধ্যমে এই কুলেই ভয়ঙ্করী ভয়হরা আদিমাতৃকার আদি সাধনার ধারাটি পুনরায় আত্মপ্রকাশ করেছিল পাল-সেনযুগে। কালীর বর্তমান রূপের উত্থানও এই কুলের সঙ্গে সংযুক্ত।
advertisement
আরও পড়ুন: জন্মদিনে ঠাকুমার দেওয়া উপহার ছিল লটারির টিকিট, তাতেই ৮ কোটি জয় নাতির! অবিশ্বাস্য
গাজনের জাগরণ রাত্রি থেকে কেউ লাউসেনপাতা, কেউ রুদ্রদেবপাতা, কেউ কালিকাপাতা। এখানে পাতা অর্থে পালনকর্তা। মনে রাখতে হবে পা শব্দটি সহজযানে চুরাশি মহাসিদ্ধের নামের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। লুইপা, কুক্কুরীপা, সরহপা, কাহ্নুপা থেকে শুরু করে নারোপা, বিরূপা, ঢেন্ঢণপা পর্যন্ত এই রীতিই দেখা যায়। পাতা শব্দটি কি সেই নামকরণের রীতির সঙ্গেই যুক্ত? কল্পনা করুন পালযুগের উড্ডিয়ান।
আরও পড়ুন: সকাল থেকে তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন, গরমের মারাত্মক জ্বলুনি এই জেলায়
দেবী বজ্রযোগিনীর মহাপীঠে অগণিত সহজযানীর সমাবেশ ঘটেছে। তাঁরা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন। কেউ দারিকপা শিষ্য। কেউ শবরীপার সহচর। কেউ অজোকাপার সঙ্গে এসেছেন। কেউ ভুসুকুপার সঙ্গে। রুদ্রদেবের গাজনে ভক্তদের এই নামকরণও বোধহয় সেভাবেই হয়েছে; তন্ত্রের এক একটি ধারার ঐতিহ্য সঙ্গে নিয়ে। এখানে কোনও দল আসেন ঘোর লালরঙে নিজেদের আপাদমস্তক রাঙিয়ে। কেউ আসেন কালোরঙ মেখে। লাল কালো এই দুই রঙ উপমহাদেশে মাতৃসাধনার সঙ্গে বহুকাল ধরেই নিবিড় ভাবে সংযুক্ত।
আবার সাদা, লাল, কালো, হলুদ ও সবুজ এই পাঁচ রঙ বজ্রযান ও সহজযানে পঞ্চ কুলের বর্ণও বটে। ভক্তরা এই রঙের পাশাপাশি নিজেদের সাজান সাদা ফুলের মালায়। আর পরিধান করেন নরকরোটির মালা। গাজন উৎসব উপলক্ষে মুল আকর্ষণ থাকে মরার মাথা কঙ্কালের নাচ। মন্দির প্রাঙ্গনে কঙ্কালের দেহাবশেষ নিয়ে শুরু হয় শ্মশান বোলান। আর তা দেখতে ভিড় জমান বহু সাধারণ মানুষ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই।
কৌশিক অধিকারী