আরও পড়ুনঃ সাবধান! মোবাইলের বদলে সাবান! পুজোর মুখে ভিনরাজ্যের প্রতারকদের ঘাঁটি বাংলাতে
১৯৮৬ সালে, মাত্র ১৮ বছর বয়সে ভারত উৎসবে, রাশিয়ায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেই শুরু হয় তাঁর বাজনার তালে পথচলা। তারপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কী নেই তাঁর ঝুলিতে? বড় বড় সম্মান, পুরস্কার, বিদেশ ভ্রমণ, গুণী শিল্পীদের সঙ্গে কাজ। এত কিছুর পরেও তাঁর আক্ষেপ, বর্তমান প্রজন্ম এই পেশার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। তিনি আর কেউ নন, বাংলার স্বনামধন্য ঢাকি লালু দাস। লালু দাসের বাপ-ঠাকুরদাও ঢাকি ছিলেন। ফলে ছোট থেকেই ঢাক বাজানোয় হাত পাকিয়েছেন তিনি। ১৯৮৯ সালে মুম্বইয়ের আরব সাগরের তীরে বাসিন্দাদের তাঁর বাদ্যে মশগুল করেন লালু দাস।
advertisement
তারপর থেকে প্রতি বছরই গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্যের দুর্গাপুজোয় ডাক পড়ে তাঁর। ২০০৪ সালে হনলুলু অ্যাকাডেমি অফ আর্টস এর ডাকে যান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে। ২০০৬ সালে ভয়েস অফ বেঙ্গল অনুষ্ঠানের মঞ্চে জাদু দেখায় তাঁর ঢাক। ২০০৭ সালে পাড়ি দিয়েছিলেন সিডনি-সহ অস্ট্রেলিয়ার শহরগুলিতে। এতো গেল বিদেশের কথা। দেশের এমন কোনও প্রান্ত নেই যেখানে তিনি ঢাক বাজাতে যাননি। এ হেন প্রতিভাবান শিল্পীকে সারাটা বছর পেটের দায়ে টানতে হয় ভ্যান কিংবা রিক্সা। যদিও তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই তাঁর।
২২জন নিজের দলের ঢাকি ও কাঁসর বাদকদের নিয়ে মুম্বই রওনা দেওয়ার আগে এখন জোড় প্রস্তুতি চলছে ঢাক বাজানোর। যদিও লালু দাস বলেন, ‘পুজোর সময় কিছুটা কাজ মিললেও, সারা বছর কিছু কাজ থাকে না তাই আগে রিক্সা, ভ্যান চালাতাম। টোটোও চালিয়েছি। কিন্তু এখন বয়স হয়ে যাওয়ায় সেসব ছেড়ে দিয়েছি। লোকের বাড়ির পুজোয় ডাক পেলে যাই। এভাবেই চলে যাচ্ছে। তবে এবছর আবার ডাক এসেছে লালু ঢাকির। পুজোর আগেই রওনা দেবেন মুম্বই।
লালু দাস বলেন, ‘সব পেলাম কিন্তু কোনওদিন সরকারি স্বীকৃতি পেলাম না। সরকারের পক্ষ থেকে গাইয়েদের পুরস্কৃত করা হলেও, বাজিয়েদের জন্য কোনও পুরস্কার নেই।’ গলায় সন্তুষ্টির স্বর নিয়ে বললেন,ঢাক বাজিয়ে তাঁর মতো নাম কজনই বা পেয়েছেন? কিন্তু, তাঁর স্বপ্ন এই প্রজন্মকে এই পেশার প্রতি আকৃষ্ট করা। কিন্তু, তার জন্য কিছু সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন। সরকার যদি পাশে দাঁড়ায় তা হলে আগামী দিনে আরও অনেক লালু দাস বিশ্বদরবারে বাংলাকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসাতে পারবেন।
কৌশিক অধিকারী