খড়গপুর থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার রয়েছে ঐতিহাসিক মোগলমারি। মোগলমারি বর্তমানে একটি অখ্যাত গ্রাম নয়। বিশ্ববাসীর কাছে এক পরিচিত নাম। রয়েছে ইতিহাসের নিদর্শন। ইতিহাস নিয়ে নানান মতের পার্থক্য রয়েছে। বেশ কয়েকজন ইতিহাস গবেষক মনে করেন, রাজা বিক্রমাদিত্যের কন্যা সখীসেনার অধ্যয়নের জায়গা ছিল এটি। সেখান থেকে এই নাম এসেছে বলে মনে করা হয়। মোগলমারীর এই প্রত্নক্ষেত্র একটি পাঠশালা বলে মনে করা হয়।
advertisement
আরও পড়ুন: পেঁপে খেয়েই জল খাচ্ছেন? সর্বনাশ! ভুলেও এই খাবারগুলি পেঁপে খেয়ে খাবেন না!
অন্যদিকে চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং তার গ্রন্থ সি ইউ কি’ তে বঙ্গদেশের চার রাজ্যের বিশেষ বর্ণনা করেছিলেন- পুন্ড্রবর্ধন, সমতটী, কর্ণসুবর্ণ এবং তাম্রলিপ্ত। এই তাম্রলিপ্ত রাজ্যে ১০টি বৌদ্ধবিহার ও এক-হাজার বৌদ্ধ সন্নাসীর উপস্থিতির কথা উল্লেখ করেছিলেন। এযাবৎকাল পর্যন্ত তাম্রলিপ্ত সন্নিহিত অঞ্চলে কোন বৌদ্ধবিহার-ই আবিষ্কৃত হয়নি, মোগলমারি ব্যতিত। পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন স্থলের মধ্যে মোগলমারি অন্যতম। যা আজ সখীসেনার পাঠশালার সকল জনশ্রুতির দ্বিধা দ্বন্দ্বকে দূরে সরিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে অবস্থিত অন্যান্য বৃহৎ ও প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপত্যগুলির মধ্যে এটি অন্যতম।
আরও পড়ুন: পুরুষদের যৌবন ফিরিয়ে দেবে এই ছোট্ট ফল! সুখের জীবন পেতে জানুন খাওয়ার সঠিক নিয়ম
১৯৯৯ সালে সুবর্ণরেখার গতিপথ ধরে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের অধ্যাপক অশোক দত্ত দাঁতন-এর মোগলমারিতে এসে, সখিসেনা ঢিবি নামে এক ঢিবির সন্ধান দেন। ২০০৩-০৪ সাল নাগাদ খননকার্য শুরু হয় দাঁতনের মোগলমারিতে।খননে পাওয়া যায় নকশাযুক্ত ইট, বৌদ্ধ ভিক্ষু বা সন্ন্যাসীদের বাসস্থানের কুঠুরি। পাওয়া যায় ত্রিরথ কাঠামো যুক্ত নকশা, যা দেখে গবেষকদের প্রাথমিক অনুমান স্থানটিতে মন্দির বা গর্ভগৃহ ছিল। গ্রামের অভ্যন্তরে খনন চালিয়ে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধস্তূপ ও এক বিশেষ ধরনের মৃৎপাত্র সহ নানা প্রত্ন সামগ্রী পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: জন্মের পরেই চিৎকার করে কেন কাঁদে শিশু? একটি সুস্থ বাচ্চা দিনে কত ঘণ্টা কাঁদে? জানুন
এরপর ২০০৬, ২০০৭ সাল নাগাদ খননে ঢিবির পূর্ব ও পশ্চিম দিকে পাওয়া যায় নকশাযুক্ত ইট দ্বারা সুসজ্জিত দেওয়াল, স্টাকো পলেস্তারা যুক্ত দেওয়াল, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের থাকার কুঠুরি। উদ্ধার হয় খণ্ড বিখণ্ড বুদ্ধের মূর্তিও।এরপর থেকে একের পর এক খননে নানান ইতিহাসের দলিল উদ্ধার হয়।ইতিহাস গবেষকরা জানিয়েছেন এটি ছিল একটি মহাবিহার।পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে মোগলমারিতে বৌদ্ধ বিহারের সংরক্ষণ ও সাজিয়ে তোলার কাজ হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে পর্যটনের নতুন দিশা হবে দাঁতনের এই মোগলমারি বৌদ্ধবিহার। তাই শীতে কয়েক দিনের ছুটিতে একদিনের জন্যও ঘুরে দেখতে পারেন দাঁতন এর এই বৌদ্ধ বিহার।
রঞ্জন চন্দ