তবে নেপথ্যে রয়েছে মোগল ও পাঠানের যুদ্ধের এক ইতিহাসের কাহিনী। স্বাভাবিকভাবে গরমের ছুটিতে কোথাও থেকে ঘুরে আসার পরিকল্পনা করলে ঘুরে দেখতে পারেন বাংলা সীমানায় থাকা এই সুপ্রাচীন রাজবাড়ি। জানতে পারবেন নানা ইতিহাস। বিশাল বিশাল খিলান যুক্ত এই রাজবাড়ি, সাদা ধবধবে রাজবাড়ির রুচি ও সংস্কৃতি মিল রয়েছে বাংলার সঙ্গে।
advertisement
পশ্চিমবঙ্গের খুব কাছেই এক প্রাচীন জনপদ লক্ষণনাথ। সুবর্ণরেখা নদীর তীরবর্তী এই এলাকার এককালে ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের বন্দর। এখান থেকেই চলত ব্যবসা। ইংরেজ শাসনের আগে তৎকালীন বাংলার অন্তর্গত জলেশ্বর এবং সংলগ্ন এলাকায় মোগল পাঠানের যুদ্ধের সময় এই লক্ষণনাথ এলাকায় সুবর্ণরেখা নদীকে কেন্দ্র করে চলতো ব্যবসা বাণিজ্য। পরবর্তীতে ১৫৭৫ সালের পর পাঠানদের যুদ্ধে পরাস্ত করে মোগলরা। এরপর, বন্যার কারণে জলেশ্বর থেকে অনতিদূরে এবং সুবর্ণরেখা নদী কেন্দ্রে বাণিজ্য কেন্দ্র থেকে অর্থ তোলার জন্য মানসিংহ এই লক্ষণনাথে একটি পরিবারকে প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এখানেই গড়ে ওঠে তাঁদের রাজবাড়ি। তৎকালীন সময়ে এই এলাকা ছিল সুবে বাংলার অধীনে।
আরও পড়ুন: ‘দাঁড়াও, তোমার হাত কাঁপছে কেন…?’ চিৎকার করে উঠল কনে! পরমুহূর্তে যা ঘটল, ঘাম ছুটল বরের!
রাজবাড়িটি মোগল স্থাপত্য অনুসরণে নির্মিত সামনে বিশাল মাঠ মোগল ভাবনায় যাকে বলা হয় দেওয়ান-ই-আম। প্রধান প্রবেশ পথ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে চারদিক ঘেরা মহলের মাঝখানে বিশাল উঠোন। পেছনের দিকে রয়েছে অন্দরমহল। এখানে যারা বসতি স্থাপন করেছিলেন তাদের পদবী রায়, তাই ওড়িশা সরকার এটিকে রায় মহাশয় প্যালেস বলে চিহ্নিত করেছেন। এখানে রয়েছেন ন’টি শিবের মন্দির রয়েছে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মন্দির। রাশানের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে শ্যামা মায়ের মন্দিরও। ইতিহাস গবেষকদের মতে, পরবর্তীতে বাংলা বিহার এবং ওড়িশা ভাগ হয়ে যাওয়ার পর লক্ষণনাথ থেকে যায় ওড়িশা রাজ্যের অধীনে। পাশেই দাঁতন হয়ে যায় বাংলার শেষ সীমানা। এখানেই গড়ে ওঠে সুবিশাল রাজবাড়ি।
বর্তমানে সেই সময়ের কড়ি, বর্গা সুবিশাল দালান খিলান এবং একাধিক মন্দির এখনও রয়ে গিয়েছে। উত্তর পুরুষদের পাশাপাশি গ্রামের মানুষ তার রক্ষণাবেক্ষণ করেন। বিশাল আকার জায়গা জুড়েই প্রতিষ্ঠিত এই রাজবাড়ি। সামনেই রয়েছে একাধিক শিবের মন্দির। রয়েছে দুর্গা মন্ডপ থেকে আরও বেশকিছু মন্দিরও। এখানের ভাষা, লোকসংস্কৃতি এবং রুচি দুই রাজ্যের মিশ্র সংস্কৃতির প্রভাবে তৈরি। স্বাভাবিকভাবে এই দেশের ছুটিতে যারা একটু ঘুরে আসার প্ল্যান করছেন তারা ঘুরে দেখতে পারেন বাংলা ও ওড়িশা সীমানায় থাকার এই রাজবাড়ি। জানতে পারবেন নানা ইতিহাস।
রঞ্জন চন্দ