বর্ধমান রাজ পরিবারের চিকিৎসক ছিলেন ডাক্তার অন্নদাশঙ্কর মুখোপাধ্যায়। তিনিই আজ থেকে প্রায় ৩০৭ বছর আগে স্বপ্নাদেশ পেয়ে শুরু করেন এই পুজো। বর্ধমান ২নং ব্লকের বৈকুণ্ঠপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে থাকতেন বর্ধমান রাজ পরিবারের চিকিৎসক অন্নদাশঙ্কর মুখোপাধ্যায়। বর্তমানে মুখোপাধ্যায় পরিবারের সেই বসতবাড়ির ছত্রেছত্রে মলিন দশা, কিন্তু আজও সেই রীতিনীতি মেনেই হয় পুজো। অন্নদাশঙ্কর মুখোপাধ্যায় যেহেতু রাজ পরিবারের চিকিৎসক ছিলেন, তাই তাঁর জীবিতকালে রাজপরিবারের সদস্যরা আসতেন এই জগদ্ধাত্রী পুজোয়। পরবর্তীকালে রাজ আমল যতদিন ছিল, ততদিন রাজপরিবারের কোনও না কোনও প্রতিনিধি আসতেন। কিন্তু রাজপ্রথা চলে যাওয়ার পর আসতে আসতে রাজপরিবারের সদস্যদের আসাও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মুখোপাধ্যায় বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে আজও পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি মেতে ওঠেন গ্রামবাসীরা। জয়দেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অন্নদাশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের দুই কন্যা সন্তান ছিল। তাই তার কন্যার উত্তরাধিকারী হিসেবে জয়দেব বাবুরাই বর্তমানে মুখোপাধ্যায় বাড়ির এই জগদ্ধাত্রী পুজো করেন।দেবী মূর্তিতেও রয়েছে বিশেষত্ব। এখানে দেবীর দুই পাশে রয়েছেন দুই মুনি-ঋষি।
advertisement
সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মুখোপাধ্যায় পরিবারের রীতি মেনে আজও পুজোর জন্য মঙ্গলঘট নিয়ে আসেন এই পরিবারের কোনও কন্যা সন্তান। নবমীর দিন হয় কুমারী পুজো। নবমীর দিনই যেহেতু সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীর পুজো হয়, তাই দেবীকে তিনবার ভোগ দেওয়া হয় এ’দিন। দেবীর ভোগে থাকে নানান পদ। সপ্তমী পুজোর জন্য হয় খিচুরি আর ১১ রকমের ভাজা। অষ্টমীতে পায়েস ও কলার বড়া। নবমীতে ভাত, ১৩ রকম ভাজা, পায়েস, ফ্রায়েডরাইস, মাছ, মাংস, ফুলকপির তরকারি, কচু-বেগুনের তরকারি, চালতার টক, ছোলার ডাল, কলার বড়া-সহ একাধিক পদ। পরের দিন দশমী পুজো হয়।
জৌলুস হারিয়েছে বর্ধমানের মুখোপাধ্যায় বাড়ির বসতভিটে, তবুও ৩০৭ বছরের প্রথা মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে পূজিত হন দেবী জগদ্ধাত্রী। কর্মসূত্রে পরিবারের অনেকে বাইরে থাকলেও, পুজো উপলক্ষে ফিরে আসেন বৈকণ্ঠপুরে। পুজোর আনন্দে মেতে ওঠে গোটা পরিবার।






