চিকিৎসাটি শুরুর পর চার দশকেরও বেশি পেরিয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বে প্রায় ৮০ লক্ষ শিশু আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছে। ভারতেও অসংখ্য দম্পতি এই চিকিৎসায় উপকৃত হয়েছেন। ল্যাবরেটরি থেকে মানবশরীরে কী ভাবে নতুন প্রাণ সৃষ্টি হয়, বিশদে বুঝিয়ে বললেন ইনফার্টিলিটি স্পেশ্যালিস্ট ডাঃ প্রসেনজিৎ কুমার রায়। তিনি জানালেন, সাধারণত প্রতি চোদ্দো জনে একজন মহিলার সন্তানলাভে সমস্যা হচ্ছে। যে মহিলারা ফাইব্রয়েড, এন্ডোমেট্রিয়োসিস বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে ভুগছেন তাঁদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা বেশি। শুক্রাণুর অস্বাভাবিকতা, ডিম্বাশয়, ডিম্বনালী বা জরায়ুর সমস্যা, ডিম্বাণু নিঃসরণে অসুবিধে, এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রেও গর্ভধারণে সমস্যা হয়।
advertisement
আরও পড়ুনParenting Tips: বাচ্চা কোলে নিলেই চুপ, নামিয়ে দিলেই শুরু কান্না! সন্তানের মন বুঝুন বাবা-মায়েরা
প্রথমে ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশন দিয়ে স্ত্রীর ডিম্বানু তৈরির চেষ্টা করা হয়। স্বামীর সমস্যা থাকলে তাঁকে ওষুধ দিয়েও ফল হয়েছে। ওভারিতে সিস্ট, ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লক, এন্ডোমেট্রিয়োসিস বা পলিসিস্টিক ওভারি থাকলে অনেক সময়ে ল্যাপরোস্কোপি – হিস্টিরিয়োস্কোপি করা হয়। এই পদ্ধতিগুলিতে সন্তান ধারনের সম্ভাবনা বাড়ে। এগুলিতে কাজ না হলে আইইউআই বা (ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন, ডিম্বাণু ও শুক্রাণুকে কাছাকাছি আনা হয়) অথবা আইভিএ-এর পরামর্শ দেওয়া হয়। ডা. রায় বলছেন, ফ্যালোপিয়ান নালির সমস্যায় আইভিএফ ছাড়া উপায় নেই।
ডাক্তারবাবু আরও জানান, আইভিএফ পদ্ধতিটিতে একটু অস্বস্তি বোধ হতে পারে। তবে এতে যন্ত্রণার কোনও ভয় নেই। ওষুধ দেওয়ার কারণে ডিম্বাশয় বড় হয়ে যায়, হরমোনের পরিবর্তনে শরীরে জল জমে। তাতে একটু ভারী লাগে নিজেকে, খিঁচুনি লাগতে পারে। এগুলো কয়েক দিনেই ঠিক হয়ে যায়। ডা. রায় বললেন, সমীক্ষায় প্রমাণিত যে, নলজাতক ও স্বাভাবিক উপায়ে জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে মেধাগত ও শারীরিক কোনও তফাত নেই। বরং আইভিএফ-এর সুবিধে হল, ভ্রূণের ছোট্ট পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় শিশুর জটিল রোগ বা জিনগত ত্রুটি আছে কি না। কাজেই গর্ভধারণে সমস্যা থাকলে মন খারাপ করবেন না। কখনওই কিন্তু হাল ছেড়ে দেবেন না। কুণ্ঠা ঝেড়ে ফেলে বিজ্ঞানের সাহায্য নিন। সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলুন, ফুটফুটে সন্তানের হাত ধরে।
অনির্বাণ রায়