এই মিষ্টির নাম ল্যাংচা কেন? এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত। অনেকেই বলেন, ল্যাংচার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বর্ধমানের পাশাপাশি কৃষ্ণনগরের নামও। কথিত আছে, কৃষ্ণনগরের রাজকন্যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বর্ধমানের রাজপুত্রের। বিয়ের কিছুদিন পর রাজকুমারী অন্তঃসত্ত্বা হলে কৃষ্ণনগরের রাজা মেয়েকে নিজের বাড়ি নিয়ে যান। কিন্তু ক’দিন পর থেকেই খাবারে রুচি হারিয়ে ফেলে রাজকন্যা। রাজবাড়ির রাজভোগও তার বিস্বাদ মনে হয়।
advertisement
মেয়ের এই অবস্থায় মহা দুশ্চিন্তায় পড়লেন রাজা। ডাক পড়ল রাজ্যের তাবড় তাবড় হাকিম- কবিরাজের। একদিন রাজকন্যা নিজেই তাঁর বাবাকে ডেকে বললেন, তিনি বর্ধমানে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে এক ময়রার হাতে তৈরি রসে ডোবানি,কালো রঙের ভাজা মিষ্টি খেয়েছিলেন। সেই মিষ্টি খেলেই নাকি তাঁর মুখের রুচি ফিরবে। কিন্তু রাজকন্যা সেই ময়রার নাম বলতে পারেন না। শুধু বলেছিলেন,ময়রাটির একটি পা ছিল খোঁড়া।
রাজা বর্ধমানে তাঁর দলবল পাঠালেন সেই ময়রাকে খুঁজে আনতে। অবশেষে তাকে খুঁজে নিয়ে আসা হল কৃষ্ণনগরের রাজবাড়িতে এবং তিনি আবার রাজকন্যার জন্য বানালেন এক ভাজা মিষ্টি। রসে দিয়ে মিষ্টি নরম করে পরিবেশন করলেন রাজকন্যার জন্য। শুধু রাজকন্যাই না, এই মিষ্টির স্বাদে মজে গেলেন স্বয়ং রাজাও।
এই মিষ্টির নাম কী? সেটা কেউই জানতেন না। তাই অবশেষে সেই ময়রা, যিনি মিষ্টি বানিয়েছিলেন, তিনি যেহেতু খুড়িয়ে বা লেংচিয়ে হাঁটতেন, তাই মিষ্টির নাম হল ল্যাংচা। রাজা খুশি হয়ে ময়রাকে দেন প্রচুর উপহার। কৃষ্ণনগর থেকে বর্ধমানে ফিরে শক্তিগড়ের ল্যাংচা দোকান শুরু করে ময়রা ।
কিন্তু ইতিহাসবিদ সর্বজিৎ যশ জানান, ল্যাংচার ইতিহাসের সঙ্গে কোনওভাবেই কৃষ্ণনগরের যোগাযোগ নেই। এই তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুল। এমনকি রাজপুত্র ও রাজকন্যার যে বৈবাহিক সম্পর্কের কথা বলা হয়, তাও ভুল। কারণ কৃষ্ণনগরে রাজার সঙ্গে বর্ধমানের রাজার সুসম্পর্ক ছিল না। ল্যাংচা তৈরি হয়েছিল বর্ধমানের শক্তিগড়েই। এর সঙ্গে কৃষ্ণনগরের কোনও যোগাযোগ নেই। যিনি এই মিষ্টি তৈরি করেছিলেন, তিনি যেহেতু লেংচিয়ে হাঁটতেন, তাই মিষ্টির নাম হয় ল্যাংচা।
সায়নী সরকার





