হালকা সবুজ রঙের দেখতে এই মহুয়া ফুল স্বাদেও বেশ।চৈত্রের তীব্র দাবদাহের মধ্যেও এই ফুল বেশ রসালো হয় আর স্বাদে অম্লমধুর। গাছের নিচে যেন হালকা সবুজের কার্পেট গোছানো থাকে মহুল ফুলে।জঙ্গলমহলে সকাল হতে না হতেই মহুল ফুল কুড়োনোর ব্যস্ততা দেখা যায়। এই রুক্ষ আবহাওয়ায় যেহেতু জঙ্গলমহলে তেমন চাষ আবাদ হয় না, তাই এই মহুল ফুল-ই প্রান্তিক মানুষগুলোর জীবন-জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হয় ওঠে।ভেষজ গুণে মহুয়া অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
advertisement
মহুয়ার পাতা, বাকল, ফুলের নির্যাস ও তেলের বীজ নানা রোগের চিকিত্সায় বহুকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।মহুল ফুল সর্দি কাশি, অগ্নিমান্দ্য, আন্ত্রিক রোগ, অর্শ, বাত-ব্যথা, মাথার ব্যথা—এসবের নিরাময়ে গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়া পুরোনো ক্ষত ও কীট দংশনেও বিষ-ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই ফুল। জঙ্গলমহলের মানুষেরা প্রাকৃতিক হিসেবে মশার যন্ত্রণা, কীটপতঙ্গের দংশনের ক্ষেত্রে মহুয়া বীজের তেল ব্যবহার করে থাকে।
যা জঙ্গলমহলের ভাষা কড়চা তেল ওবলে।এছাড়া কৃমির চিকিৎসায় মহুয়া বীজের তেল ব্যবহার করা হয়।শুধু তাই নয় জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে মহুল ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। জঙ্গলমহলের মানুষেরা মুকুল ফুল কুড়িয়ে, রোদে শুকিয়ে গেলে এরা ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে।
মহুল ফুলে প্রচুর পরিমাণে সুগার, মিনারেল ও ভিটামিন থাকে। এই ফুলের নির্যাস থেকে এক বিশেষ ধরনের অ্যালকোহল সমৃদ্ধ পানীয় বানানো হয়ে থাকে। যা ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর অন্যতম এক পানীয়।
আরও পড়ুন: Grahan ka Daan: চন্দ্রগ্রহণের পরে দান করুন রাশি অনুযায়ী, টাকা পয়সা উপচে পড়বে, সৌভাগ্য চিরস্থায়ী
এছাড়া এর ফল কাঁচা অবস্থায় রান্না করে খাওয়া হয়। পরিপক্ক অবস্থায় এই ফলের বীজ থেকে তেল প্রস্তুত করা হয় যা স্থানীয়ভাবে ‘কচড়া তেল’ নামে প্রসিদ্ধ।আগেকার দিনে এই তেল ব্যবহার করে রান্না করত তবে এখন আর তেমন ব্যবহৃত হয় না।এই কচড়া তেলের ভেষজ গুণ অপরিসীম। এই তেল জয়েন্টের ব্যাথা, মাথা ব্যথা, সর্দিকাশি ও কৃমি নিরাময়ে উপসমদায়ক।
আরও পড়ুন: পান্তাভাতের ইংরেজি জানেন?
এছাড়াও ক্ষত নিরাময়ে ও কীট-পতঙ্গ কামড়ালে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এছাড়াও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আচার অনুষ্ঠানে এই মহুল গাছের উপস্থিতি মঙ্গলজনক মনে করা হয়। ওনাদের বিয়েবাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই গাছ ভগবান রূপে পূজিত হয়ে থাকে।
এই গাছ জঙ্গলমহলের জনজীবনে মাতৃসম।
Ranjan Chanda