১৮১০ থেকে ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেবিদাস ঘোষের বংশধর কালীপ্রসাদ ঘোষ নির্মাণ করেন পাঁচ খিলানযুক্ত পাকা দুর্গাদালান। তার পর থেকে সেই দালানেই চলে আসছে ঘোষবাড়ির দুর্গোৎসব। এই বংশেই ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নেন রাখালদাস ঘোষ, পরবর্তীকালে যিনি শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের মানসপুত্র ও স্বামী বিবেকানন্দের গুরুভাই স্বামী ব্রহ্মানন্দ নামে পরিচিত হন। শৈশবে দুর্গাদালানে দেবীমূর্তির রূপে ধ্যানস্থ হতেন ছোট্ট রাখাল। বোধন তলায় বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠতেন “পূজা-পূজা খেলায়”, গাইতেন শ্যামাসঙ্গীত। শিকড়ার এই মাটিতেই তিনি মাতা হেমাঙ্গিনী দেবীকে ভূমিষ্ঠ প্রণাম করেছিলেন।
advertisement
পরবর্তীকালে ১৯৫৯ সালে শিকড়া কুলিনগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন—যা আজও এই এলাকার আধ্যাত্মিক গৌরবের প্রতীক। স্বামী ব্রহ্মানন্দ নিজেই পরিবারের সদস্যদের বলে গিয়েছিলেন— ”দেখিস, এই পুজো যেন কোনওদিন বন্ধ না হয়।” সেই কথার মর্যাদা রেখেই আজও ঘোষবংশের উত্তরপুরুষরা সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান মেনে আয়োজন করে চলেছেন দুর্গোৎসবের। মহালয়ার পর প্রতিপদে বসে দেবীঘট। ষষ্ঠীর দিন হয় বোধন। মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী ও মহানবমী পালিত হয় মহাসাড়ম্বরে। অষ্টমীর দিন ভক্তদের জন্য থাকে ঐতিহ্যবাহী লুচি-ভোগ।
অবশেষে আসে মহাদশমী। সমস্ত রীতি মেনে পুজো সম্পন্ন হওয়ার পর শুরু হয় দেবীর কৈলাস যাত্রা। কাহার সম্প্রদায়ের বেহারাদের কাঁধে চড়ে ঘোষবাড়ির মা দুর্গা যাত্রা করেন বিসর্জনের পথে। স্থানীয় পুণ্যপুকুরেই বিসর্জন হয় মৃন্ময়ী রূপের। আজও রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে ঘোষবংশের সদস্যরা এই পুজো উপলক্ষে ফিরে আসেন শিকড়ার আদি বাড়িতে। পুজো ঘিরে সমবেত হয় সমগ্র গ্রামবাসী। ইতিহাসের সাক্ষী দুর্গাদালান, কাহারদের কাঁধে ভাসমান প্রতিমা, আর উত্তরপুরুষদের নিষ্ঠা—সব মিলিয়ে ঘোষবাড়ির দুর্গোৎসব আজও এক অনন্য ঐতিহ্যের প্রতীক।