এই মন্দিরেই এক গভীর কুন্ডের সাড়ে সতেরো হাত নিচে অধিষ্ঠিত আছেন একলিঙ্গ মহাদেব। ফাল্গুন মাসের শিবচতুর্দশীর তিন দিনব্যাপী মেলায় হাজার হাজার পুণ্যার্থী আসেন এই শিবদর্শনে। মন্দিরের মূল কাঠামো নির্মিত হয়েছে ইষ্টকে, যার উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখা যায় চূড়ার ওপর উজ্জ্বল মহাদীপ। মন্দিরের প্রতিটি অংশে রয়েছে সূক্ষ্ম অলংকরণ, কষ্টিপাথরের মূর্তি, বিষ্ণুপাদপদ্ম, যক্ষমূর্তি এবং কার্ত্তিক ও হনুমানের প্রতিকৃতি। এখানে রয়েছে খিলানযুক্ত গর্ভগৃহ, ছাদবিহীন বারোদুয়ারি নাটমন্দির এবং নহবতখানা। সব মিলিয়ে মন্দিরটি এক পবিত্র ও ঐতিহ্যমণ্ডিত পরিবেশ তৈরি করে, যা দর্শনার্থীর মনে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে।
advertisement
দিঘা ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য এই মন্দির হয়ে উঠতে পারে একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। কেবল সমুদ্রসৈকতের আনন্দ নয়, তার সঙ্গে যদি কিছুটা ইতিহাস ও আত্মিক প্রশান্তিও পাওয়া যায়, তবে তো কথাই নেই। এই মন্দিরে এসে যে কেউ কিছুটা সময় শিব দর্শনে কাটিয়ে ফিরে যেতে পারেন জীবনের ভিন্ন এক অনুভব নিয়ে। অনেক পর্যটকই দিঘা থেকে ফেরার পথে হট্টনাগর মন্দিরে এসে নির্জনে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে শিব দর্শনের সুযোগ নেন।
আরও পড়ুনঃ দিঘা যাওয়া এবারে আরও সহজ! স্পেশ্যাল লোকাল চালাচ্ছে রেল, লক্ষ লক্ষ পর্যটকদের জন্য বিরাট পদক্ষেপ
হট্টনাগর শিবমন্দির শুধু একটি প্রাচীন স্থাপত্য নয়, এটি এই অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাস, সংস্কার, ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক জীবন্ত স্মারক। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই মন্দির যেমন ধরে রেখেছে উৎকলীয় নির্মাণশৈলীর নিদর্শন, তেমনই ধারণ করে রেখেছে সাধারণ মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষা ও ভক্তির স্রোত। মন্দিরের প্রতিটি প্রস্তরে, প্রতিটি অলিন্দে যেন লুকিয়ে আছে ইতিহাসের নীরব কথা, ভক্তির গভীরতা এবং আত্মিক প্রশান্তির স্পর্শ।
আজকের ডিজিটাল যুগেও যখন মানুষ কৃত্রিম জীবনে হাঁপিয়ে ওঠে, তখন হট্টনাগর মন্দিরের মত স্থান একটিবারের জন্য হলেও মানুষকে ফিরিয়ে আনে নিজের শিকড়ে। প্রকৃতির মাঝে নির্মল বাতাস, প্রাচীন ইতিহাসের ছোঁয়া, এবং ঈশ্বরের স্পর্শ, সব মিলিয়ে হট্টনাগর মন্দির যেন হয়ে ওঠে আত্মশুদ্ধির এক পবিত্র ঠিকানা। যাঁরা দিঘার তরঙ্গের মাঝে আনন্দ খোঁজেন, তাঁরা চাইলে একটু সময় বের করে হট্টনাগরেও আসতে পারেন। এই মন্দির তাঁদের মনে শুধু ভক্তি নয়, এক গভীর প্রশান্তির ছায়া ফেলে যেতে পারে, যা সত্যিই স্মরণীয় হয়ে থাকবে সারাজীবন।
মদন মাইতি